Saturday, 5 November 2016

Dr. Sayd Rono (all poem)

জীবন
ড.  সৈয়দ রনো

শ্বাপদ সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করেই তো জীবনের কাঙিক্ষত নির্মাণশৈলির উপর দাঁড়াতে হয়। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই তো পথ চলা। জীবনের চোরা গলি মারিয়েই তো প্রশস্ত রাস্তার দেখা মিলে। অভিজ্ঞতার ঝুলি ঘাত প্রতিঘাতের কর্কশ বাক্য শ্রবণে পূর্ণতা পেলে কটুক্তিতে খেই হারায় না জীবন। দুঃখের ঘাটে বসে সুখ বিলাসী কল্পনা যতো হৃদয়ঙ্গম হয় তদ্রƒপ সুখের অট্টালিকায় বসে দুঃখ কষ্টের নির্মমতা কেউ ভাবতেও চায় না। এ বাক্যের ভিত যেমন শক্তিশালী তেমনি মজবুত। 
দুঃখ কষ্টকে কেউ আপন করতে চাইলে খুব সহজ সাধ্য কাজ। কিন্তু সুখ শান্তি নিয়ে জীবন পরিচালনা করার কথা শুধু ভাবনায়ই সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব। বাস্তবিক অর্থে অত্যন্ত কঠিন, প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে দুঃখের হাটেই কিন্তু সুখ বিক্রি হয়। দুখি নদীর উজান বেয়েই কিন্তু সুখের ঘাটে তরী ভিড়ে। লক্ষ্য স্থির করে পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় এর মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। যে কোন কাজের অর্ধেক সম্পূর্ণ করে মনোবল। মন যদি বলে কাজটি আমার পক্ষে সম্ভবপর তাহলে কাজের অর্ধেকাংশ সম্পূর্ণ হয়ে গেল ধরে নিতে হবে। আর কাজের ধরণ ধারণ শুনে যদি কেউ প্রথমেই ভর্কে যায় কিংবা অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে তাকে দিয়ে সে কাজ করানো অসম্ভব।
সুখ এবং দুঃখ উভয়ের বসবাস নিজের ভেতর। সুখ দুঃখ আপেক্ষিক ব্যাপার বলে অনেক বোদ্ধা মনে করেন নিজেকে নিজে সুখি ভাবলেই হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও কথা থেকে যায়। নিজের বোধে নিজেকে সুখি ভাবলেই কি সুখি হওয়া যায়। বর্তমান সময়ে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যায়ভার বেড়ে গেছে। আগেকার মতো চাইলেই জীবনকে প্রবাহিত করা যায় না। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ এবং সাফল্যে মানুষের মূল্যবোধ যেমন বেড়েছে তেমন বেড়েছে জীবন যাত্রার মান।
এই জীবন যাত্রার ব্যয় মিটাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্লো গতিতে এগোয় জীবন। জীবনের ঘানি টানতে টানতে এক সময় এসে আবার থমকে যায় জীবনের চাকা। মুখ থুবড়ে পড়ে জীবন। 
বহু বৈচিত্র ঘটনা প্রবাহ মারিয়ে আজকের এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে মারিয়ার জীবন। মারিয়া তার ছোট্ট জীবনের নানা প্রতিকূলতার কথা বলছিল ইমনের নিকট। ইমন নাক কুচকে মৃদু স্বরে শুধু বলে, আমরা দুঃখের স্মৃতি চারণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি কিন্তু সুখের দিনগুলো কখনই স্মৃতির আয়নায় ভাসিয়ে তুলি না। এটাই আমাদের জাতিগতভাবে সমস্যা। সুখ বোধটুকু জাগ্রত করে যদি দুঃখের মুখোমুখি দাঁড়াই তাহলে দেখবো দুঃখ জয়ে অনুপ্রেরণা পাবো। পাবো নিজের ভেতরে নৈতিক শক্তি। নৈতিক শক্তিই কিন্তু মানুষকে উজ্জ্বীবিত করে। করে আত্মশক্তিতে বলিয়ান। কথাগুলো এক নিমিষেই বলে ফেললো ইমন। মারিয়া ইমনের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে রুদ্র নীল চোখের মনিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। 
মারিয়া শহরের মেয়ে। চোরাগলির সুয়ারেজ পানির দুর্গন্ধ তাকে রাস্তা পেরুবার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। অনেক চড়াই উতড়াই অতিক্রম করে আজকের এই রমনা পার্কে এসে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া লেখার পাঠ চুকাতে না চুকাতেই সরকারী চাকরি পেয়ে গেছে। আর ইমন এখনও বেকার। লেখাপড়া শেষ হয়েও হলো না শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে ভর্তি হয়েছে। বি.সি.এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পরীক্ষার পর্ব অতিক্রম করতে পারেনি। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিধিবাম। কথায় আছে, ‘কপালের লেখন না যায় খন্ডন’। মানুষ স্বর্গে গেলেও কপাল তার সঙ্গে যায়। 
 কন মানুষ এতো স্বার্থপর হয়। স্বার্থপরতার জন্য আপন মানুষ পর হতে থাকে। পকেট খালি হলে বন্ধুও দূরে সরে যায়। দূরে সরে যায় মনের মানুষটিও। এরূপ অনেক উল্টা পাল্টা ভাবনা এসে ইমনকে গ্রাস করে ফেলে। আনমনে কয়েকটি দূর্বার ডগা ছিঁড়ে। এরপর ধীরে ধীরে ওঠে দাঁড়ায়। আনমনা ক্লান্ত পায়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। পিছন পিছন হাঁটতে থাকে মারিয়া। ততক্ষণে আলো আঁধারির লুকোচুরি খেলায়, পূর্ণতা পেয়েছে রমনা পার্ক। মানুষের নিকট প্রকৃতি তার রূপ লাবণ্য মেলে ধরেছে।
বেশ কয়েকদিন হলো ইমন এবং মারিয়ার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত নেই। সবাই যার যার মতো জীবন এবং জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ নেই। নেই প্রেম বিরহের খুচরা আলাপ। এটাই ওদের প্রেমের স্বভাব চরিত্র। কথা হচ্ছে তো হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা হচ্ছে। কথা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম ফেলে ওরা দু’জন মোবাইলে কথা বলছে। নতুন যে কেউ দেখলে ভাববে না যেনো কতো কালের কতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ওদের আলোচনা হচ্ছে। অন্য কোন দিকে মনোযোগ নেই। মনোযোগ শুধু সাজিয়ে গুছিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলা। এভাবে কিছুদিন চলবার পর হঠাৎ দেখা যাবে কথা বন্ধ। বলা নেই, রাগ নেই, অভিমান নেই হঠাৎ করেই কথা বন্ধ থাকে বেশ কয়েক দিন। 
এতো ঘন প্যাচাল পারতেই বা কে বলে, আবার কারণ ছাড়াই কেউ কাউকে ফোন দিবে না এরূপ মুড নিয়েই বা কে থাকতে বলে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই বৃথা। কারণ প্রশ্ন শূন্যে আবর্তিত হয়ে শূন্যেই মিলিয়ে যায়। কি জানি বাপু! থার্ড জেনারেশনদের মতিগতি বুঝা মুশকিল। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় থার্ড জেনারেশন মেধাবি এবং সৃষ্টিশীল হবে। এরা সৃষ্টিশীলতার আনন্দে মাতিয়ে তুলবে দেশ। জাতি বিশ্বায়নের রাস্তায় পায়ে হাঁটার যুতসই একটা মোটা দাগের অবলম্বন খুঁজে পাবে। অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এখনও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যা অচিরেই দূর হবে বলে আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। আমি আশাবাদি মানুষ। আর আশাবাদি মানুষরা আগামি দেশের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের মধ্যে বেঁচে থাকতে চায়। তাই আমি নিরাশার চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে চাই না। আশার সমুদ্র ভ্রমণে ভাসতে চাই সফেদ ফেনায়। আকাশের অবস্থাটা তেমন একটা ভালো নেই। সকাল হতে কেমন যেনো মুখটা গোমরা করে বসে আছে আকাশ। দুপুরের দিকে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। 
ফাগুনের শুরুতেই বৃষ্টি তেমন একটা সুখকর নয়। ফাগুনের আগুন শুধু এখন গ্রামের কৃষ্ণচূড়ার ডালেই লাগে না। লাগে শহুরের পথ, ঘাট, দালান কোঠা ছাপিয়ে যুবক যুবতীর অঙ্গে। সাদা জমিনের লাল পাড়ে শাড়িতে নারীরা সাজে। কপালে ইয়া বড় টিপ, মাথায় গোল করে প্যাচানো গাঁদা ফুলের মালা। ছেলেদের ধূতি, পাজামার উপরে পরিধেয় ফতুয়ার মধ্যে বাহারি কারুকাজ করা। খাটি এবং জীবন্ত যুবক যুবতীর চিত্র। হয়তো এটাই ফাগুনের আগমনের আগাম বার্তা। দোল যাত্রা, রেলি, শোভাযাত্রা, হোলি খেলা সবই এখন গ্রাম থেকে বিদায় হয়ে শহরের কোলে পাড়ি জমিয়েছে। যাক বাঙালির কালচার যে, এখনও ইট পাথর, লোহা লক্করের মাঝে টিকে আছে তাই বা কমতি কোথায়। সবচেয়ে অবাক হবার মতো বিষয় হলো, গ্রামীণ কালচার এখন বাহিরের জরাজীর্ণ পরিবেশে সাহেব বিবির উলঙ্গ নৃত্যের মুদ্রায় টিকে আছে।
সে যাই হোক, ফাগুনের আগুনলাগা গহীন বন এখন সোহরাওয়ার্দীর উদ্যান। প্রতিটি গাছের পত্র পল্লব ফাগুনের আগমনের জীবন্ত স্বাক্ষী। 
লালন ছাউনীর কিঞ্চিত দূরে একটি গাছের নিচে দূর্বা ঘাসের গালিচার উপর বসে আছে ইমন। ইমনের মন আজ ভারাক্রান্ত। পূর্বের সেই চঞ্চলতা নেই, নেই হাস্যোজ্জ্বলতা। বার বার মারিয়াকে ফোন দিচ্ছিল ইমন। ও প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দিচ্ছে।
মোবাইল করে যদি কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। মানুষ মানুষকে যদি তাচ্ছিল্য করে তাহলে তার ফোনটা বার বার কেটে দিতে পারে। কাউকে ফোনে না পাওয়া কিংবা কারো জন্য অপেক্ষা করা যে, নরক যন্ত্রণা ভোগের নামান্তর এ বিষয়ে ইমন হারে হারে উপলব্ধি করছে।
পশ্চিম দিগন্তে অস্তমিত হয়েছে সূর্য। সূর্য দেবীর প্রস্থানে ক্ষণিকের জন্যে হলেও রক্ত গঙ্গায় ভেসেছিল আকাশ। এখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজির পত্র পল্লবের ফাঁকে খেলা করছে আলো আঁধারির দৃশ্য। কিঞ্চিত দূরে খানিকটা ঝোপের মতো যেখানে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের সাথে খানিকটা উষ্ণ আলিঙ্গন বিনিময় করছে। প্রেমিক প্রেমিকার নিচু স্বরের কথাবার্তা এখানে বসে অল্পবিস্তর শুনছিল ইমন। ইমন পকেটের মোবাইল ফোনটা বের করে আরো কয়েকবার ট্রাই করে।
না কোন অবস্থাতেই ঐ প্রান্ত থেকে মারিয়া ফোন তুলছে না। ইমন রাগে দুঃখে অভিমানে হাতের মোবাইল সেটটি অন্ধকারের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। অন্ধকার আকাশের দিকে অনেক সময় তাকিয়ে থাকে। খোলা আকাশ থেকে নিংড়ে হা করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। হাত বুলায় নিজের মাথার চুলে। স্ব-জোড়ে একটি হাক ছাড়ে। এরপর পকেটের দেয়াশলাই বের করে আগুন জ্বালায়। হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজতে থাকে নিজের মোবাইল। অন্ধকারের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরে মোবাইল সেট। না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ মোবাইল সেট বেজে ওঠে। জ্বলে ওঠে মোবাইল সেটের আলো।
হ্যাঁ, ফোন করেছে মারিয়া। মারিয়ার ফোন আইডি নাম্বার দেখে খপ করে ফোন রিসিভ করে ফেলে। খুশিতে ফোন সেট কানে ঠেকায়। না অপর প্রান্ত থেকে কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। কানের সাথে মোবাইল সেট লেপটে ধরে। হালকা হৈচৈ এর শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। রাগে দুঃখে ফোন কেটে দেয়।
পাশের ঝোপের ভেতর থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ। গোঙানির শব্দ মিলিয়ে গিয়ে ক্রমশ চিৎকার চেঁচামেচিতে রূপান্তরিত হয়। ধস্তা ধস্তির আওয়াজ এখান থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই ঝোপের দিকে এগিয়ে যায় ইমন। ইমনকে এগিয়ে আসতে দেখে ঝোপের মধ্য থেকে একটি ছায়ামূর্তি দ্রুত পালিয়ে যায়। ছায়া মূর্তিকে ঘিরে ধস্তা ধস্তি এবং আবেগি কান্না জড়িত কণ্ঠের প্রতিধ্বনি এখান থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে ইমন ততক্ষণে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় ছায়া মূর্তি।
ইমন ঝোপের সামনে গিয়ে অসতর্ক অবস্থায় ছোট্ট একটি গাছের সাথে হোচট খায়। কোন রকম পড়ি তো উঠি করে টলে সামনে নিয়ে পূনরায় দাঁড়িয়ে যায়। একটি নারী মূর্তি ঝোপের মধ্যে মাথা গুঁজে বসে কোকাচ্ছে। কোকাচ্ছে, না গোঙাচ্ছে, না কাঁদছে এখনও পুরোটা ঠাওর করতে পারেনি ইমন।
ইমন নিঃসংকোচে ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে এরপর খপ করে হাত ধরে ধীরে ধীরে টেনে তুলে। এ কাজগুলো ইমন মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় করছিল। মেয়েটি প্রকৃতস্থ হয়ে ইমনের সাথে লাইট পোস্টের নিচে এসে দাঁড়ায়। আলোর ঝলক গিয়ে পড়ে মেয়েটির চোখে মুখে। এখনও মেয়েটির চোখে মুখে পানি। মেয়েটির ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে তর তর করে রক্ত ঝরছে। ইমনের মনে মায়ার উদ্রেক হয়। পকেট হাতড়ে রুমাল বের করে বৃদ্ধ আঙ্গুল বেঁধে দেয় ইমন।
ইমন আঙ্গুল বাঁধতে বাঁধতে প্রশ্ন করে তোমার হাতের আঙ্গুল কাটলো কিভাবে? মেয়েটির মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না। এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কান্নার ফাঁকে বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট চেপে শুধু বললো” জানোয়ার হাতের আঙ্গুর কামড়ে দিয়েছে”। কোমলমতি মেয়েটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইমন। ইমন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে একটি মেয়ের হাতের আঙ্গুল কেউ কামড়ে দিতে পারে। এও কি সম্ভব। ইমনের হৃদয় মন্দিরে ভাংচুড় শুরু হয়।
অপরদিকে কিঞ্চিত দূরে দাঁড়িয়ে মারিয়া সব দেখে। দেখে মেয়েটির হাত ইমন তার রুমাল দিয়ে বেঁধে দিচ্ছে। দু’জনকে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতেও দেখে। কিছুক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মারিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। উদ্যানের বাইরে চলে আসে। একটি রিকশা ডেকে রিকশায় উঠে। রিকশায় বাসায় ফিরতে ফিরতে ধন্যবাদ দেয় জ্যামের শহর ঢাকাকে। রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়াতে সময় মতো আসতে পারেনি মারিয়া। সময় মতো আসলে ইমনের কু-কীর্তি তার চোখে পরতো না। তার কাছে ইমন থাকতো পুত পবিত্র। যাক ভালোই হয়েছে ইমনের কার্যকলাপ সব চোখের সামনে দেখা গেল। এসব ভেবে চিন্তে মারিয়া দর দর করে ঘামছিল। মারিয়ার মনে হচ্ছিল এই বুঝি হাঁসফাঁস করে ভেতর থেকে দমটা বেরিয়ে যাবে। অনেক চিন্তার অথৈই জলরাশি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মারিয়াকে। মারিয়ার নয়নের জলে ভাসছে মুখ মন্ডল। অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে মনে, যে সব প্রশ্নের উত্তর আজ খুঁজে পাচ্ছে না মারিয়া।




(গল্প)
জীবন বোধের নামতা
সৈয়দ রনো

দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণায় যখন ওষ্ঠাগত প্রাণ ঠিক তখন হাতের নাগালের খড় কুটো ধরে বেঁচে থাকার নিরন্তন প্রচেষ্টা চালায় আসিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। মা-বাবার স্নেহের ছায়াতলে তিলে তিলে বেড়ে উঠেছে সে। কিন্তু আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই এই অনাকাক্সিক্ষত নাকাল অবস্থা। ভাগ্যকেই বা সম্পূর্ণ দোষ দিয়ে কি হবে! বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক হানা-হানি, কোন্দল কিংবা অসহিষ্ণু পরিবেশ অনেক অংশে দায়ী। গণতান্ত্রীক এই রাষ্ট্রিয় শাসন ব্যবস্থায় ভেতরে ভেতরে স্বৈরতন্ত্রের যে চর্চা, তা আজ নতুন করে বলার কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানে নির্বাচনের নামে এ দেশে কী প্রহসন হয়েছে। যা দিন দিন সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করাতে বিবেকবান মানুষের গায়ে ফোসকা পড়ার উপক্রম। রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে একদলের মানুষ অন্য দলকে ঘায়েল করতে সত্যকে মিথ্যা বানায় আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে রাষ্ট্রিয়ভাবে নির্যাতনের চিত্র সে এক করুন ইতিহাস। বিশ্বায়নের সভ্যতা যেখানে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে রাষ্ট্র বা সরকার যেখানে পৃষ্ঠ পোষকতা করার কথা কিংবা পৃথিবীর প্রায় দেশেই করছে। সেখানে আমাদের দেশের এই বাস্তব করুণ চিত্র সত্যিই লজ্জাকর। জাতি হিসেবে আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এরকম এক বৈরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সমাজ ব্যবস্থায় আসিফের পরিবার ভুক্তভূগীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আসিফের পিতা মোখলেছ উদ্দিন একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। যৌবনের প্রারম্ভে যুদ্ধে গিয়ে স্বাধীনতা ছিনেয়ে এনেছিলেন। এখন স্বাধীনতা শব্দটি এক ধূসর ইতিহাসের পা-ুলিপি হয়ে আছে তার কাছে। পাক হানাদারদের গুলিতে হারিয়ে ছিলেন একটি পা। পচন ধরা পা কেটে ফেলে এখন এক পায়ে ক্রাচ ভর করে হাঁটেন। বেঁচে আছেন শুধু এক বুক ভয়াল যন্ত্রণাকে ঘিরে। একে বেঁচে থাকা বলে না, মৃত্যুর নামান্তর মাত্র। না ভালোভাবে সংসার চালাতে পারেন, না পুত্র আসিফ আর কন্যা আফিফার লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেন। অনেক চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সরকার দলের লেজুড়বৃত্তি না করলে কোনো অবস্থাতেই সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা পাওয়া যায় না। ভুল ক্রমেই হোক আর শুদ্ধ ক্রমেই হোক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত হতে সংসার পরিচালনার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক গ্রহণ করেছিলেন, যা এখন তার জানের কাল হিসেবে প্রতি মুহুর্তে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটি ভাতা চালু ছিল, তাও সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজনীতির কড়াল গ্রাষে নিষ্পত্তি হয়ে ধণী হচ্ছে আরো ধণী, গরীর হচ্ছে সহায় সম্বলহীন-নিঃস্ব। সেই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে মোখলেছ সাহেবের পরিবার। সরাকরি দলের লেজুড়বৃত্তি করে মানুষ অবৈধ অর্থে তরতর করে উপরের দিকে উঠে যাওয়ার রেওয়াজ বাঙালীদের অনেক পুরনো ইতিবৃত্ত।
এই ভূখ-ে মানব জাতির বসবাস পৃথিবী সৃষ্টির পাক কাল থেকেই। আদিম হিংস্রতা বর্বরতাকে উপেক্ষা করে মানুষ জীবন ধারণ করেছে। মানুষের বেশ কিছু সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে তার মধ্যে আরাম, আয়েশ, বিলাস, খায়েশ মানুষের গুণকীর্তন শোনা, অপরকে আপন করে নেয়ার বাসনা উচ্চাভিলাষ, নাম, খ্যাতি, যশ কুড়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী, তদরূপ অমানবিক হলে কিন্তু ক্রোধের বশে এই মানুষই পৃথিবীর সর্ব নিঃকৃষ্ঠ প্রাণী হয়। মানুষ যেমন পর-উপকারী এই মানুষই আবার পরের অমঙ্গলকারী। জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক থাকার কারণে কিংবা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ে মানুষ ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। মানব সৃষ্ট কম্পিউটার, আবার সেই কম্পিউটার যা অজান্তে প্রয়োজনীয় একটি বস্তুর কার্যক্রমকে নষ্ট করতে মানুষ ভাইরাস সৃষ্টি করেছে। মানুষকে মানুষ সংবর্ধনা দেয় আবার মানুষকে আটকে রাখতে তৈরি হয়েছে জেলখানা। ইহকাল কিংবা পরকালে বিচার হবে মানুষের। অন্য কোনো প্রাণীর বিচার হবে না। কারণ মানুষের রয়েছে মেধা, প্রজ্ঞা, বুুদ্ধিমত্তা এবং বুদ্ধিমত্তাসহ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি।
মানুষ যে কতো ভালো হতে পারে আবার এই মানুষই স্বার্থের কারনে কতো খারাপ হতে পারে, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের মূল গল্পের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে রাজনীতি। এখন রাজনীতি প্রসঙ্গে দু’চারটি কথা বলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। 
এশিয়া মহাদেশ কিংবা উপমহাদেশের গ-ি পেরিয়ে কিংবা ধর্ম, বর্ন, বংশ, গোত্র, এলাকা ভেদে একেক দেশের রাজনীতির হালচাল একেক রকম। সামন্ত প্রভুদের হাত হতে রাজনীতি মুক্তি লাভের পর আবহাওয়া, জলবায়ু, কৃষ্টি-কালচার ভেদে একেক দেশের রাজনীতির কালচার একেক রকম। মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আমাদের রাজনীতিকে উপজীব্য করে ফুটিয়ে তুলতেই এতো আলোচনা, এতো কথার আয়োজন।
রাজনৈতিক দলের পালা বদলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদল ঘটে আর জীবন যন্ত্রনা বেড়ে যায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। সরকার আসে আর সরকার যায়। অথচ মানুষের দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণা বেড়ে আকাশচুম্বি হয়। আসিফদের মতো শত-সহস্র পরিবার ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়। মোখলেছ উদ্দিন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হবার পরেও রাজাকারের খেতাবে ভূষিত হোন। কারণ তিনি সরকারি দলের অন্ধ সাপোর্ট করতে পারেন না কিংবা জানেন না। সাদাকে সাদা বলা  আর কালোকে কালো বলা মোখলেস সাহেবের ধমনিতে প্রবাহিত। চাটুকারিতা তার একদম অপছন্দের বিষয়। সংসার চালাতে পারছেন না। না জোটে তার পরিবারে ক্ষুধার অন্ন, না জোটে সঠিক চিকিৎসা। পুরনো ভাঙ্গা একটি ক্রাচে ভর দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন মোখলেছ সাহেব। যৌবনের প্রারম্ভে তার দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে এক জনকে ডাক্তার, আরেক জনকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। মুক্তিযুদ্ধের ভাতা বন্ধ হবার পর তার স্বপ্ন ক্রমশ ফিকে হয়ে আসে। বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু সান্তনায় বুক বাঁধেন, যখন দেখেন এই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করেন। ওরকম অসৎ ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ঠিকাদার তার ছেলে- মেয়েরা না হোক, সেটাই সৃষ্টি কর্তার নিকট দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে সান্তনায় বুক বাঁধেন।
এই সমাজ সংসার রাষ্ট্র কার্যত অর্থে তাকে কিছুই দেয়নি বরং কেড়ে নিয়েছে যৌবনের উত্তাল দিন। নতুন বিবাহিত স্ত্রী খাদিজাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে গেলেন। নবজাতক শিশুর নিষ্পাপ চাহনীও সেদিন তাকে আটকাতে পারেনি। দেশের প্রতি গভীর মমতাবোধের ফসল হচ্ছে এই বৃদ্ধ বয়সে দু’বেলা দু’মুঠো পেট পুরে খাওন জোটে না। চোখের সামনে ছেলেটির লেখাপড়ার জন্য হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম তার বেদনার ঘায়ে লবনের ছিটার মতো সারাক্ষন জ্বলতে থাকে। ছেলে আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পড়ালেখার খরচ ম্যানেজ করতে দুই-তিনটি টিউশনি করায়। মেয়েটিরও একই অবস্থা কলেজে পড়ালেখার অবসরে একটি সেলাই মেশিন আছে। যা দিয়ে কন্ট্রাক্টে সেলাই করে, নিজ কাধে করে মাল দিয়ে আসে দর্জির দোকানে। ছেলে-মেয়ের উপার্জনে ওদের পড়ালেখা ভালোভাবে চলতো, কিন্তু তার মধ্যে বাবা-মাকে খাবার আর ওষুধ কিনে দিতে গিয়ে ওরা ভিষণ পেরেশানির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিস্কৃত শ্রেষ্ঠ রোগ হয়তো দুশ্চিন্তা। যে রোগের ওষুধ নেই। সেই দুশ্চিন্তা এখন মোখলেছ সাহেবের পরিবারের নিত্য সাথী।
রোগে, শোকে, দুশ্চিন্তায় জড়াগ্রস্থ মোখলেছ সাহেব ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ভর করে হাঁটা ক্রাচটিও সেদিন ভেঙ্গে গেছে। এখন বাঁশের একটি লাঠি কিংবা স্ত্রীর কাধে ভর করে হাঁটা-চলা করেন। মাঝে মধ্যেই গলা দিয়ে রক্ত বেরোয়। শ্বাস কষ্টে প্রাণপাখি উড়ে যাবার উপক্রম। শরীরটা দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবু বেঁচে আছেন মোখলেছ সাহেব এটাই সত্য, এটাই বাস্তব। হঠাৎ একদিন মোখলেছ সাহেবের পঙ্গু পায়ে ঘা দেখা দেয়। ছেলে আসিফ প্রায় জোর-জবরদস্তি করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডাক্তার দেখাতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তাররা তার পায়ের ঘায়ে ক্যান্সার হয়েছে বলে জানান। মরার উপর খাড়ার ঘা। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে আসিফ। এরপর টাকা ম্যানেজ করতে ছুটে চলে গলি হতে রাজপথ, আর রাজপথ ধরে প্রাসাদসম অট্টালিকার গা ঘেষে ছুটতে থাকেন এই ব্যস্ততম ঢাকার শহরে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনিতে ভালো ইনকাম নেই বলে মনোস্থির করে- সে রিকশা চালাবে। রাতে রাতে রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে কোনোভাবে চলে আসিফের বাবার চিকিৎসা। হঠাৎ একদিন একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে ওঠে আসিফের রিকশায়। তারা মিরপুর যাবে বলে ৭০ টাকা ধার্য করে। তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ রিকশাটিকে আটকে দেয়। ছেলে এবং মেয়ের ব্যাগ তল্লাশ করে পায় গান পাউডার, তাজা বোমা, পিস্তল, গুলি ইত্যাদি। এগুলো দেখে আসিফের চোখ ছানাবড়া! কিংকর্তব্য বিমূঢ় আসিফ। কিন্তু পুলিশ আসিফসহ তিন জনকেই ধরে নিয়ে যায়। আসিফ অনেক ভাবেই বুঝাতে চায় সে রিকশা চালায়, এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। কিন্তু আসিফের পকেটে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র এবং ভাড়া নেয়া রিকশা মালিকের গ্যারেজের বক্তব্যে পুলিশ পুরোপুরি সন্দেহ করে আসিফকে। পুলিশের বক্তব্য হলো- তুমি যদি এদের দলের লোকই না হবে, তাহলে মাত্র তিন চার দিন যাবৎ রিকশা চালাবে কেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী রিকশা চালাবে তা অবাস্তব। আসিফ অনেক করে বোঝাতে চায় তার বাবা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, হাসপাতালে ভর্তি। কোনো কথায় কর্ণগোচর করেন না পুলিশের বড় বাবু। নিরুপায় আসিফ চিৎকার চেচামি করে ছুটে পালাতে চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়। আসিফের পিঠে গুলি বিদ্ধ হয়। উপুড় হয়ে পরে যায় সে পিচ ঢালা রাজপথে। শুধু আসিফের ক্ষীণ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- বাবা আমি আসছি ওষুধ নিয়ে। ফিন্কী দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। ক্ষণিকেই রাজপথ বয়ে চলে রক্তের নহর। গুলি চালানো সেই পুলিশটি চিৎকার করে বলে- শালা রাজাকারের বাচ্চা জামাত, এবার পরপারে গিয়ে রাজাকারী করগা.....

Monday, 31 October 2016

Muhammad Salim Raza- Poem

Muhammad Salim Raza
1993

Poet Details:

-------------------------- কবিতা-৩০----------------------------
মা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা মা

 
তুমিই তো আমার ত্রিভূনের আলোক দিশারী
মা
তুমিই আমার রক্তপিপাষুদের রক্তিম মশারী
মা
তুমি আমার হৃদয়ের ত্রিপটের ধুকধুক করা ধমনী
মা
তুমিই আমার অরাজমান ভুবনের শ্রেষ্ঠ জননী।
মা
তোমাকে ছাড়া ভাবতে পারি না দুনিয়া দিক্ষিতপুর
মা
তুমি ছাড়া দুল্যক ছাড়ি চলে যাবো দূর বহুদূর।
মাগো
তোমার হাস্যোজ্জল সম্মুখ দেখে হৃদয়ের সুখ দোলে
মাগো
তোমাকেই মিষ্টি দু’লিপ বারবার মাগো মাগো বলে। 


-------------------------- কবিতা-২৯----------------------------
একুশ তুমি কোথায়
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

একুশ তুমি কোথায় আছো
বাংলাদেশ না ইন্ডিয়ায়
একুশ তুমি বন্দি এখন
ইংলিশ হিন্দির পিঞ্জিরায়।


একুশ তুমি কোথায় আছো
বাংলাদেশের কোন জেলায়
একুশ তুমি যাচ্ছো কোথায়
বাঙ্গালিদের অবহেলায়।

একুশ তুমি কোথায় আছো
কলেজ নাকি মাদরাসায়
একুশ তোমায় পাই না খুঁজে
স্কুলেরই পাঠশালায়।


-------------------------- কবিতা-২৮----------------------------
হায় কবিতা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

হায় কবিতা,
হাত উচিয়ে, দুলিয়ে দুলিয়ে বলনা হায়!

হায় কবিতা,
তুমি কি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাবতি
কোন যৌবনা ললিতা?

হায় কবিতা,
বলতেই বুকের ভেতর থেকে বলো উঠো
হায়!

কে তুমি?
তুমি কি আমার ভেতরে থাকা কেউ?
কেন তুমি আমার ডাকে সাড়া দাও?
কেনইবা গুণগুণিয়ে গান করো, খেলা করো?

হায় কবিতা।
আজ বড় আফসো হচ্ছে!
তোমাকে বিকৃত করা হচ্ছে,
তোমাকে পঙ্গু করা হচ্ছে,
তোমাকে করা হচ্ছে বিকলঙ্গ?

কবিতা,
তুমি জেগে উঠো সকল অবিকৃত,
অবিবেচিত, অমার্জিত আর নিকৃষ্ট
বচনের বিরুদ্ধে।
তুমি খর্ব করে দাও বিভর্স ভাষার,
বিতাড়িত করো অমার্জিত কথনি।

হায় কবিতা
তুমি প্রেম হয়ে উঠো,
তুমি রঙ্গিয়ে দাও মানুষের অন্তর
তুমি ভালোবাসো মানবাত্মাকে,
ভালোবাসাতে শেখাও অমানুষকে।

১৮-০২-২০১৭

-------------------------- কবিতা-২৭----------------------------
আমি একুশ
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

আমি একুশ আসি বারবার ফিরে
প্রতি মাসের অপরাহ্নে
আমি একুশ বলি, তাজারক্তে
রাস্তা হ্রদ বায়ান্নে।

আমি একুশ, স্মরণ করিয়ে দেয়
রফিক সালামের কথা
আমি একুশ, বুক চিরিয়ে দেখায়
হৃদয়ে যত ব্যথা।

আমি একুশ, দেখি বাংলার বুলি
তিলে তিলে ক্ষয় নরকে
আমি একুশ, থাকি বইমেলারই
বুকের পরতে পরতে।
আমি একুশ, দেখি আব্বারে কয়
ড্যাডি কিংবা ড্যাড
আমি একুশ দেখি মেসেঞ্জারে
ইংলিশে করে চ্যাট।

আমি একুশ, দেখি বাংলিশে
ভরে গেছে এদেশ
আমি একুশ, দেখি স্যার মাডাম
দিচ্ছে বাহবা বেশ।

আমি একুশ, দেখি চারহাজার
ভাষার আমি অষ্টমীতে
আমি একুশ, বলি ভাষার জন্য
আর কেইবা জীবন দিসে।

আমি একুশ, বলি এমন মধুর
সুরে কেই ডাকে মা’
আমি একুশ, ক্ষুব্ধ হই’ যখনি
বলে কেউ মাদার।


আমি একুশ, কেন বাংলা শুধু
পত্রিকারই আর ম্যাগাজিনে
আমি একুশ, কেন ইংরেজি
বলে মজুর, ডাকপিয়নে।

আমি একুশ এলেই কেন
ফুল দিয়ে পুজো করো,
আমি একুশ বলছি, ফুল
দিয়ে রফিকের মন ভর।

আমি একুশ, চাই না কোন
অপাদভরা গান
আমি একুশ, চাই শুধু
বাংলা ভাষার মান।

১৬-২-১৭

-------------------------- কবিতা-২৬----------------------------

নির্ভীক মোল্লা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা
 


মোল্লা মানে এক আল্লাহকে করে ভয়
মোল্লা  যদি সৎ পথে চলা মানুষ হয়
মোল্লা যদি নিভৃতে কাঁদে নিরালয়ে 
অটুট বিশ্বাস রাখে নিরেট নিরুপায়ে।

মোল্লা যদি সত্যকে সাম্যবাদ মানে
মোল্লা যদি মিথ্যাকে মিথ্যা জানে
নাহি নাহি নাহি তাহার কোন ভয়
দু’ভবনে আল্লাহ তাহার সহায় হয়।
 

৬-৭-১৭
 

-------------------------- কবিতা-২৬----------------------------
বাংলার প্রাণ
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


গোলগাল নরমাল মুখের গড়ন তাঁর
এমন হুর দুনিয়ায় দেখিনি তো আর

গায়ের গঠন সুঠম নিপুণ শুভ্রতায় ভরা
শত মানুষের হৃদ মাজারে কল্পনারই তারা

সাদামাটা জামা গায় কুর্নিশ ফোর্ট
জামাটার নতুন নাম মুজিব কোর্ট

মিষ্ঠ, সুরেলা, দীপ্ত, বজ্র তাঁর কণ্ঠ
প্রতিভার সাতকাহন নেই যাঁর অন্ত

নিষ্ঠা, সততা, উদারতা সর্বগুণে ঠাসা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দীপ্ত তার ভাষা

একাত্ত্বরের নরক দিনে মানুষের হাহাকার
শক্তহাতে দমন করলেন হায়েনা-রাজাকার

মায়ের আঁচল ছিঁড়ে খাচ্ছে হায়েনার ঝাঁক
মা ভক্ত খোকা গর্জে দিলো মুক্তির ডাক।

বাংলা মায়ের সম্ভ্রম তিনি, তিনি তরুলতা
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আনলো স্বাধীনতা

যাহার তরে বাংলার ঘরে শান্তির কলতান
বাংলার কৃতিসন্তান শেখ মুজিবুর রহমান।

২২-১-২০১৭
১২.০০  রাত

-------------------------- কবিতা-২৬----------------------------
মাসুম বিল্লাহ স্যারের স্বরণে-

আপনাকে ভাবি
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

আপনাকে মনে পড়ে এই অবেলায়
বেঁধে রেখেছো মোরে কোন মমতায়।

ছুটে যেতে মন চাই তোমারো পানে
শতকাজ তবু মোর মন নাহি মানে।

কবে পাবো দেখা তব তাই ভাবি ক্ষণ
দেখা করে কথা হলে ক্ষান্ত হবে মন।
 

-------------------------- কবিতা-২৫----------------------------
মামা বাড়ি
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

টাপুরটুপুর মধ্য দুপুর
সোনার নুপুর পায়,
একটু সুযোগ পেলেই খোকা
মামার বাড়ি যায়।

ভিন্ন মেলা ভিন্ন খেলা
ভিন্ন মজা পাই,
যখন তখন মামার বাড়ি
খোকা যেতে চায়।

প্রকাশিত: টাপুরটুপুর,

-------------------------- কবিতা-২৪----------------------------
স্বাধীনতার মানে
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

স্বাধীনতার মানে খুঁজি বানরের কাছে
বানর বলে-
উন্মাদ হও সবে রংতামাশার নাচে।

সুখ তুমি খুঁজে নাও রমনীর ভাজে
বানর হলে-
ফূর্তিতে মাতো তুমি জগতের মাঝে।

নিয়ম-নীতি তুঙ্গে তুলে দুনিয়া কম্পান
বানর চলে-
স্বাধীনতার রঙ্গতলে রঙ্গেরও সম্পান।

রঙ্গরসের সঙ্গপনে নয় সে স্বাধীনতা
মানুষ তরে-
মগ্ন হয়ে করবে সেবা থাকবে অধীনতা
 

-------------------------- কবিতা-২৩----------------------------
খোকা হাসে
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

মোবাইলে কথা বলে
সিঁড়ি বেয়ে চলতে গিয়ে
চিৎপটাং হয়ে পড়ে

তা দেখে-
খিল-খিলিয়ে খোকা হাসে।

তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে
উল্টো জামা গায়ে দিয়ে
দাদু চলে হেলেদুলে

তা দেখে-
খিল-খিলিয়ে খোকা হাসে।

কিড়িং কিড়িং রিং বাজে
বস আছেন মগ্ন কাজে
কলম ধরে হ্যালো বলে

তা দেখে-
খিল-খিলিয়ে খোকা হাসে।

আটোসাটো জামা গায়
মিয়া-বিবি হেঁটে যায়
তাদের যা দেখা যায়

তা দেখে-
খিল-খিলিয়ে খোকা হাসে।

যেমন খুশি তেমন সাজে
গেদু চাচা মরে লাজে
নারী সাজে লাগছে বাজে

তা দেখে-
খিল-খিলিয়ে খোকা হাসে।


-------------------------- কবিতা-২২----------------------------
ব্যস্ততা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

আজ অনেক কাজ ছিলো
বসে আমায় কল দিলো
বললো খুবই জরুরী কাজ
না বলে দিবেন না লাজ
তাই আজ হলো দেরি
প্লিজ রাগ করে না, সরি।

দরজা খুলে রুক্ষ কণ্ঠে
বললে আমায় বেজায় মন্ডে
রোজ রোজ একই কথা
আমি এক তন্দ্রিলতা
তোমার সাথে দিলাম আড়ি
চলে যাবো বাপের বাড়ি।

ও সোনা রাগ করে না
ঘুমাও তুমি গোল করে না
ভাত আমি খাচ্ছি বেড়ে
আজও আমি গেলাম হেরে
এমন সুখে আছে কি কেউ
পেয়ে এমন লক্ষ্মী বউ।
 

-------------------------- কবিতা-২১----------------------------
শংক বাজে
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

ভালো আছি বলতেই তোর ঠোঁট কাঁপে
জীবনের কাছে হেরে সুখ-দুখের মাপে

জীবনটা ভ্রষ্ট, অতিষ্ট দুঃখ কষ্টের চাঁপে
সরীসৃপ হয়ে গেছিস জীবনের নৃঢ় ধাপে

নিশাচর হয়ে গেছিস লোক লজ্জার আঁচে
এখনও জোনাকি আছিস আমারও কাছে

অতীতের গ্লানি বয়ে বেড়াস সকাল সাঝে
যা হবার হয়েছে তোর কি-ই করার আছে

নতুন করে স্বপ্ন দেখো হৃদয়ের মাঝে
অদূরেই রংধনু রক্তিম পাশে শংক বাজে

-------------------------- কবিতা-২০----------------------------
গাঁধাফুল
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


তুমি মোর জীবনের অনন্যা
যে আমার কাছে রাজকন্যা
যার রূপের নেই কোন তুলনা
সে এক মহিয়সী ললনা।

যাকে নিয়ে লিখি আমি কবিতা
যে আমার মনেরই মৌমিতা
যে আমার হাতে আঁকা আলপনা
যাকে ভাবি মনেরই কল্পনা।

যার ভালোবাসায় হই আকুল
যার ছোঁয়ায় হই আমি ব্যাকুল
সেই তুমি আমার গাঁধাফুল
তুমিই মোর জীবনের সাতকুল।
৬-৬-১৭
-------------------------- কবিতা-১৯----------------------------
অনেক আছে চাওয়া
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

অনেক আছে চাওয়া আমার
পাইনা যে তার নুণ্যতম
নুণ আনতে পানতা ফুরোয়
যাচ্ছে জীবন হরদম।

অনেক আছে চাওয়া আমার
ডাল ভাতই পাই না
ভালো একটা জামা-কাপড়
শুভ দিনেও রইনা।

অনেক আছে চাওয়া আমার
মাছ মাংস আর পোলাও
কোন রকম দিন কাটাচ্ছি
খেয়ে পান্তা ছোলাও।

অনেক আছে চাওয়ার আমার
দামী গাড়ি আর বাড়ি
টিনের চালেই যাচ্ছে কেটে
জীবন নায়ের তরী।

অনেক আছে চাওয়ার আমার
জামদানি আর নেকলেস
এমন স্বামী পাইলাম আমি
জীবন বুঝি শেষ।

অনেক আছে চাওয়ার আমার
করবো লন্ডনে বাড়ি
দেশের যে দূরাবস্থা
তাতে কি পারি।

অনেক আছে চাওয়া আমার
থাকবো দু’জন চাঁদে
ভীষন পারাই  ভূগছি এখন
পড়ছি র‌্যাবের ফাঁদে।

২২/৬/২০১৬

-------------------------- কবিতা-১৮----------------------------
গান
ভাবতেই চোখে জল আসে
 
ভাবতেই চোখে জল আসে
কি করে রব দোযখে (২) ও

ওগো  ধরার নিরঁজন
দেখ অধোগামির করণদন
ক্ষমা করো মোরে

কি করে রবো দোযখে (২) ও



সৃজিয়াছো নিজের হাতে
রেখো তোমার রহমতে
দিওনা দিওনা নরকে

কি করে রবো দোযখে (২) ও




মুস্তাকিমের পথ দেখাও
বিপদ আপদ এধরাতে দাও
তবু দিও না দিও না জাহান্নামে

কি করে রবো দোযখে (২) ও



মুহাম্মদ সেলিম রেজা
০৫-০১-২০১৬


-------------------------- কবিতা-১৭----------------------------
তোকে ছাড়া
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

তুই যে আমার সোনার ময়না
তোতা, টিয়া পাখি
যখন তখন দেখতে চাই
আমার দুটি আখি।

তুই যে আমার আধাঁর রাতে
জোৎস্না চাঁদের আলো
তাই তো তোরে নিজের থেকে
বাসি অনেক ভালো।

তুই যে আমার কষ্টের মাঝেও
হাসি মাখা মুখ
তোকে দেখেই মন মাজারে
পাই যে খুঁজে সুখ।

তোকে ছাড়া জগৎ মাঝে
মরতে আমি রাজি
তুই ছাড়া জীবন আমার
বৈঠা ছাড়া মাঝি।

টাপুরটুপুর, সেপ্টেম্বর-২০১৬

-------------------------- কবিতা-১৬----------------------------
কবি না হয়ে
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


আমি কবি নই তবু
ক লিখতে গিয়ে ব লিখে
ত এর প্রথমাংশ আঁকার চেষ্টা করছি

হঠাৎ কলম কেন জানি থমকে গেল
দোয়াতের কালি কী আমার মনের
কথাগুলো লিখতে চাই না? তবে কি কবিতা লেখা হবে না!

কিন্তু মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা
কথাগুলো যে আজ পরিপক্ক ডালিমের মতো
বের হয়ে আসতে চাইছে।

উষার আকাশে সাতরঙা রঙধনু মিষ্টি হাসে,
দুষ্টু রঙধনুকে বললাম-
ওগো রঙধনু- তোমার একটু রঙ দেবে?
রঙধনু তার সাত রঙের বাহারী রঙ
আমাকে সাদরে বাড়িয়ে দিল।

কিন্তু একি!
একটুকরো কাগজ সেও যে
লেখনির অযোগ্য হয়ে গেছে!
কখন জানি সুপ্ত বেদনার নীল অশ্র“
চোখের কোণে বেয়ে বেয়ে
ভাসিয়ে দিয়েছে এক নদী।

ভেসে গেছে হিমালয়, ভেসে গেছে মাতৃভূমি!
তবে কি আমার কবিতা লেখা হবে না?

কিন্তু আমি আজ কোন বাধাই মানবো না,
যেভাবেই হোক কবিতা যে আমায় লিখতেই হবে
মনের কথাগুলো যে আমাকে বলতেই হবে।


অবশেষে আকাশকে বললাম
হে আকাশ-
তোমার বিশাল চরণভূমিতে কিঞ্চিৎ জায়গা দেবে?
বিশাল আকাশ তাঁর বক্ষ দ্বি-গুণ করে বললো-
ওহে কণিক,
তোমার কুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, দূরুহ বেদনা,
মানবতার নিদারুন কষ্ট, নিষ্পেষিত মজলুম
জনতার কথাগুলো তুমি লিখো, লিখো আমার বুকে,
আমি জানিয়ে দেবো বিশ্ব মানবতার দ্বারে দ্বারে।

বিশাল মুক্তমনা আকাশ আর রঙের লীলিমা
মিশিয়ে লিখে চলেছি আমি, লিখছি মানুষ আর
মানবতার কথা,
বলছি বুকের কুলঙ্গির ভেতর কুটরে কুটরে খাওয়া
বচনগুলো।
বলছি বিশ্বসভ্যতার নামে অসভ্যতার বিবরণ।
বলছি, মানুষ নামের নরপশুদের উন্মাদনা।
বলছি, বর্বরতার এক নিদারুন কাহিনী।
বলছি, হায়েনাদের লুটেপুটে খাওয়া এক রমণীর গল্প
বলেই চলেছি, এ যেন অন্তহীন কথন
যেন শেষ হবার নয়!

৯-২-১৭
অপরাহ্ন


-------------------------- কবিতা-১৫----------------------------
ঘৃণা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


ঘৃণা ভালো’ না ঘৃণা ভালো নয়
মানুষকে ঘৃণা নয় ভালোবাসতে হয়।
ঘৃণা মন্দ’ না ঘৃণা ভালো হয়
পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।

ঘৃণা যে করে সেই হয় ঘৃণ্য
মুছে ফেলে ঘৃণা হতে হবে ধন্য।

ঘৃণা করে এ জগতে হয়নি কারো সাজা
ভালোবেসেই মরেছে অনেক রাজা-প্রজা।
ঘৃণা ভ্যাস ভালোবাসায় ভালোবাসার জয়
তাইতো ভালোবাসার দূর্গ যুগেযুগে রয়। 

প্রকাশিত: মাসিক ভিন্নমাত্রা,জানুয়ারি-২০১৬

-------------------------- কবিতা-১৪----------------------------
উত্তমা রমনী
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

উত্তমা রমনীর রূপেরও বহরে
মন যায় হারিয়ে স্বর্গের শহরে
ভালোবাসা জাগে হৃদয়ের নহরে
দীপ্ত হয় মন মনেরও লহরে। 

যৌবন দেখিয়া আঁখি যায় ঠাওরে
সই না যাতনা বুকেতে নাওরে
উন্মাদ হবো দু’জন প্রেমেরও হাওরে
মন বলে মন মাঝি বৈঠা বাওরে। 

অমিয় সুখ দেবো রাখবো আদরে
রাখবো জড়িয়ে ভালোবাসার চাঁদরে
ভালোবাসা দেবো তবু কেন কাঁদরে
সব ভুলে ভালোবাসা নাও না সাদরে। 


প্রকাশিত: মাসিক ভিন্নমাত্রা, ডিসেম্বর, ২০১৬
-------------------------- কবিতা-১৩----------------------------
অপেক্ষা...
মুহাম্মদ সেলিম রেজা 

এখন অনেক রাত
একলা কাটেনা রাত
আকাশে বজ্রপাত
হৃদয়ে প্রেমের প্রপাত।

ভাবি কত শত
তুই মনেরি মত
ভালোবাসবো অবিরত
হৃদয়ে আছে যত। 

কতদিন হলো গত
আমিতো আছি ব্রত
হৃদয়ে হচ্ছে ক্ষত
তুবও হয়নি নত। 

অপেক্ষা করবো কত
জীবনটা যাচ্ছে সেতো
হৃদয়টা শান্তি পেতো 
যদি তোকে পাওয়া হতো। 
-------------------------- কবিতা-১২----------------------------
অমৃত ভালোবাসা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

স্বর্গেও ভালো লাগেনি আদমের
তাই স্রষ্ঠা দিলো তাঁরে হাওয়া,
একটু সুখের আশায় আজ
তোর কাছেই ছুটে যাওয়া।

দুই দিগন্তে দুইজন তবু
হলো একদিন মিলন,
আজও আমি আশায় থাকি
পাবো বুঝি তোর মন।

দু’জন মিলিয়া করিল বিয়া
আল্লাহই ছিল তাদের কাজী,
অম্রিত ভালোবাসা দেবো তোকে
শুধু তুই হয়ে যা রাজী।

দাম্পত্য জীবন গড়িল ভুবন
আমরাই তার বংসধর
এাত ভালোবাসি তবুও কেন
মিছে ভাবিস আমায় পর।


প্রকাশিত: মাসিক টাপুরটুপুর, নভেম্বর, ২০১৬




-------------------------- কবিতা-১১----------------------------
একি লজ্জা!
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


রাস্তায় ঠাঁই নেয়, গরীব দুখী অসহায়
শিশুকে বুকে নিয়ে, রাখে মা মমতায়
খাবারের যোগানে, মায়ের ব্যর্থতায়
কেঁদেকেঁদে শিশু বলে, আমার অর্থ চায়।

যাই পায় তাই খায়, পথচারীর কর“ণায়
বাসিপঁচা বোঝে না, অতি ক্ষুধার তাড়নায়
ফুটপাতে ঘুমায় তারা, রাত কাটে যন্ত্রণায়
মশা তাড়ানোর মতো, তাদের কোন মন্ত্র নাই।

হাঁড়কাঁপা শীতে, দাঁতে দাঁত কাঁপুনি খায়
শিশুকে বুকে চেপে, মা শুধু কেঁদে যায়
অনেক শিশু-বয়স্ক, মরে শীতের কব্জায়
এসব দেখে বিভ্রম, মরি আমি লজ্জায়।

-------------------------- কবিতা-১০----------------------------
বিয়ের পিঁড়িতে
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

শৈশব কৈশোর পেরিয়ে; যৌবন বয়সে
করতে হবে বিয়ে; বাবা-মায়ের খায়েসে
তারা ভাবে থাকবো আমি; আরাম আয়েসে
অবশেষে বসলাম আমি; বিয়ের পিঁড়িতে।

অবশেষে অনেক খুঁজে, পছন্দ বউ-বর
দাদী বলে তাড়াতাড়ি, দিনক্ষণ ঠিক কর
বরযাত্রী ঘোড়ার গাড়ী, শানাই বাজিয়ে
ঘরে আনলাম বউ, লাল শাড়ী সাজিয়ে

-------------------------- কবিতা-৯----------------------------
ভালোবাসার শুণ্যস্থান
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

তোমাকেই চেয়েছি জীবনে; না
না চেয়েছি আর কিছু ভুবনে; না
না চেয়েছি অর্থ প্রাচুর্য; না
না চেয়েছি ক্ষমতার পবনে।

চেয়েছি তোমায় ভালোবাসার দামে; হ্যাঁ
হ্যাঁ চেয়েছিলাম ভালোবাসা অনুনয়ে; হ্যাঁ
হ্যাঁ ভালোবাসা যদি যেতো কেনা; হ্যাঁ,
হ্যাঁ কিনতাম আমি স্বর্গের বিনিময়ে।

বোঝনি আমার নিষ্পাপ ভালোবাসা; জানি
জানি বুঝেছিলে কোন এক সময়ে; জানি
জানি অনেক দেরী হয়ে গেছে তখন; জানি
জানি পারোনি আসতে ফিরে আবেগী প্রণয়ে।

-------------------------- কবিতা-৮----------------------------
সবচেয়ে দামী
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

গভীর নিশিতে, মনের উঠোনে,
তোর পাগলামী,
আকুল করিস, কাছেতে টানিস,
পাগল হই যে আমি।

শব্দ নিরেট, মূল্যবান হিরক,
তুই সবচেয়ে দামী,
ভালোবাসি তোকে, তুই জানিস,
আর জানে অন্তর্যামী।


প্রকাশিত: ভিন্নমাত্রা, নভেম্বর, ২০১৬

-------------------------- কবিতা-৭----------------------------
ডাব চোর
মুহাম্মদ সেলিম রেজা


কী কইবি

কই যাইবি

বাদামের ঠোঙ্গা

হাতে নিয়ে চোঙ্গা

ডাব গাছের নিচে

খেয়াল রাখিস পিছে

আমি আছি ভয় কিসে

হয়ে গেলাম পুলিশ দেখে।


প্রকাশিত: টাপুরটুপুর, অক্টোবর, ২০১৬

-------------------------- কবিতা-৬----------------------------
ক্ষমা করে দিস
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

প্রতিদিন তোর একটা মিসকলের আশায় থাকি
এই বুঝি একটা কল করছিস তুই
না, অপেক্ষার প্রহর নীল সমুদ্রে মিশে
তবু, তোর মনে পড়ে না আমায়।

হ্যাঁ, জানি একদিন খুবই মিস করবি আমাকে
হয়তো সেদিন তোর কোন উপকারে আসতে পারব না
মন প্রাণ কষ্টে চৌচির হবে তোর মনের ভীতরেই
কিছু বলতেও পারবি না, সহ্য করার শক্তিও হয়তো হারিয়ে ফেলবি
আর নিথর হয়ে অশ্রু ঝরারি, দু'চোখ বেয়ে শুধু গড়িয়ে গড়িয়ে পড়বে

আমি হয়তো সেথায় থাকবো না,
হয়তো কেউ নয়,
নীরবে যন্ত্রণায় কাতরারি তুই
ক্ষমা করে দিস সেদিন আমায়,
আমি তো তোরই আছি, খোলা জানালায়।

২৭.৯.১৬

-------------------------- কবিতা-৫----------------------------
পরকালের ভয়
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

সদা সত পথে থাকি, সত্য কথা বলি,
করিনা অহমিকা মিছে,
দুনিয়ার তরে, ভুলে মৌনলতারে
চলিনা ললনার পিছে।

ভূমিতে নুয়ি
স্রষ্ঠার কৃপায় অবনত মস্তকে,
জীবনের তরে আছি এই ভবে
যাব ঠিকই তোমার চতুস্কে।

হিসাব চাইবে যখন,
দুনিয়ার কর্মফলের,
কেমনে মিলাইব অংকের লগরিদম
আমি যে তোমার বান্দা অধম।

ডরি তোমারে,
করি যত বন্দেগী তব
নাওনা মাবুদ রহমে তোমার
তুমিই তো মোদের অনুকংপা রব


২৪.০৫.২০১৬

-------------------------- কবিতা-৪----------------------------
ঈদের শিক্ষা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

ঈদ এলো এলো ঈদ
চোখে আমার নাই নিদ
নতুন জামা পাঞ্জাবী পড়ে
আব্বু আম্মুকে সাথে নিয়ে
কখন যাবো ঈদগাহে
পড়বো সালাত একসাথে।

আলিঙ্গন করবো সবার সাথে
নেই ভেদাভেদ একে অপরে
ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিব
গরীব দুখির খবর নিব।

হাসি মুখে বলব কথা
ভুলে যাবো বিভেদ ব্যথা।

ঈদের এই মহান শিক্ষা
সুখি জীবনের নতুন দিক্ষা
ঈদের শিক্ষায় সমাজ গঠন
তবেই শান্তি মোদের ভুবন।

-------------------------- কবিতা-৩------------------------------
পথচারী
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

ভো ভো টিট টিট
চলছে আমার নতুন জিপ
পিপ পিপ, পিপ পিপ
হর্ণ বাজিয়ে চলছি ঠিক।
হঠাত একটা পথচারী
পড়লো আমার সামনে গাড়ীর
ওমনি কষে করলাম ব্রেক
লোকটা গেছে মরে অর্ধেক
তড়িঘরি আহামরি
লোকজন হলো জড়ি

জলদি লয়ে চ’ হসপিটাল
পরে হবে এর সমাধান
ততোপর বল্লো সবে
ড্রাইভিং শিখছো কবে
আমিও বল্লাম তাদের
বোধবুদ্ধি নেইকো যাদের
ফুটওভার ব্রীজ ছেড়ে তারা
জীবনের মায়া ছাড়া
রাস্তা পার হয় দিয়ে দৌড়
বেচেছে এই তো জোর।

২৫.৪.২০১৬
প্রকাশিত, টাপুরটুপুর

-------------------------- কবিতা-২----------------------------
চির সত্য
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

পৃথিবীটা বৃত্ত
বলতো নিত্য
চ্যাপ্টা, লম্বা, সমান্তরাল
বলেছিল কত কি যে যত সব আবাল।


প্রমাণিত আজ ডিম্বাকৃতি আমাদের এই ধরা
চন্দ্রের নাহি আলো সে যা পাই সুর্য্যরে অরা (আলো)
রাতের জ্যোস্না সে তো তারই ফসল
প্রেমিক যুগলের মনে জাগায় অনল।


সমুদ্র অতলে ঘোর অন্ধকার
ইহার চেয়ে কালো নেই কিছু আর
চির সত্য থাকে অম্লান
যা ইতোপূর্বে বলেছিল কোরআন।


২৮.৪.২০১৬
প্রকাশিত, মাসিক ভিন্নমাত্রা

-------------------------- কবিতা-১----------------------------
মানবতা
মুহাম্মদ সেলিম রেজা

মানুষকে ভালোবেসে
মুখে দেব অন্ন
মানুষকে ভালোবাসলে
হবো মোরা ধন্য।

টাকা পয়সা সোনাদানা
এসব কিছু নগণ্য
ক্ষমতার মোহে যেন
না হই মোরা বণ্য।

পীড়িতদের করবো সেবা
যদিও হয় কষ্ট
দূর্দশায় থাকবো পাশে
তবেই জীবন স্বার্থক।

নিজেকে করবো হেবা
অসহায়দের তরে
মানবোনা জাত ভেদাভেদ
মানবতাই স্বীয় ওরে।

হানবো না কারো সম্মানেঘাত
বলব না কটু কথা
ভাইভাই হয়ে থাকবো সবে
এইতো মানবতা।



৭.৫.১৬
প্রকাশিত, মাসিক ভিন্নমাত্রা 
------------------------------- প্রিয় উক্তি-----------------------------
প্রিয় উক্তি- (১)
জীবনে যত সমস্যা, তত শিক্ষা

প্রিয় উক্তি- (২)
সময়ের সাথে সাথে চিন্তা শক্তির পরিবর্তন হয়, সুতরাং এগিয়ে যাও

প্রিয় উক্তি- (৩)
তুমি মূলত দুইজন মানুষ। একজন ‘আপনি’ আরেকজন আপনার ভেতরে থাকা ‘আমি’

প্রিয় উক্তি- (৪)
কষ্ট না থাকলে সুখ বোঝা যেতনা, তুমি যে সুখে আছো তা বোঝার জন্য হলেও কষ্ট নিও।

প্রিয় উক্তি- (৫)
সত পথে থাকলে কষ্ট পেতে হয় ঠিকই কিন্তু‘ সুখও পাওয়া যায়,
আর  অসত পথে থাকলে কষ্ট না পেলেও  সুখও পাওয়া যায় না।

১০.০১.২০১৬


প্রিয় উক্তি- (৬)
কাউকে ঘৃণা করলে ঘৃণা পাবে
আর ভালোবাসলে ভালোবাসা পাবে।

প্রকাশিত, টাপুরটুপুর, অক্টোবর, ২০১৬।