Saturday, 5 November 2016

Dr. Sayd Rono (all poem)

জীবন
ড.  সৈয়দ রনো

শ্বাপদ সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করেই তো জীবনের কাঙিক্ষত নির্মাণশৈলির উপর দাঁড়াতে হয়। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই তো পথ চলা। জীবনের চোরা গলি মারিয়েই তো প্রশস্ত রাস্তার দেখা মিলে। অভিজ্ঞতার ঝুলি ঘাত প্রতিঘাতের কর্কশ বাক্য শ্রবণে পূর্ণতা পেলে কটুক্তিতে খেই হারায় না জীবন। দুঃখের ঘাটে বসে সুখ বিলাসী কল্পনা যতো হৃদয়ঙ্গম হয় তদ্রƒপ সুখের অট্টালিকায় বসে দুঃখ কষ্টের নির্মমতা কেউ ভাবতেও চায় না। এ বাক্যের ভিত যেমন শক্তিশালী তেমনি মজবুত। 
দুঃখ কষ্টকে কেউ আপন করতে চাইলে খুব সহজ সাধ্য কাজ। কিন্তু সুখ শান্তি নিয়ে জীবন পরিচালনা করার কথা শুধু ভাবনায়ই সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব। বাস্তবিক অর্থে অত্যন্ত কঠিন, প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে দুঃখের হাটেই কিন্তু সুখ বিক্রি হয়। দুখি নদীর উজান বেয়েই কিন্তু সুখের ঘাটে তরী ভিড়ে। লক্ষ্য স্থির করে পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় এর মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। যে কোন কাজের অর্ধেক সম্পূর্ণ করে মনোবল। মন যদি বলে কাজটি আমার পক্ষে সম্ভবপর তাহলে কাজের অর্ধেকাংশ সম্পূর্ণ হয়ে গেল ধরে নিতে হবে। আর কাজের ধরণ ধারণ শুনে যদি কেউ প্রথমেই ভর্কে যায় কিংবা অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে তাকে দিয়ে সে কাজ করানো অসম্ভব।
সুখ এবং দুঃখ উভয়ের বসবাস নিজের ভেতর। সুখ দুঃখ আপেক্ষিক ব্যাপার বলে অনেক বোদ্ধা মনে করেন নিজেকে নিজে সুখি ভাবলেই হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও কথা থেকে যায়। নিজের বোধে নিজেকে সুখি ভাবলেই কি সুখি হওয়া যায়। বর্তমান সময়ে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যায়ভার বেড়ে গেছে। আগেকার মতো চাইলেই জীবনকে প্রবাহিত করা যায় না। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ এবং সাফল্যে মানুষের মূল্যবোধ যেমন বেড়েছে তেমন বেড়েছে জীবন যাত্রার মান।
এই জীবন যাত্রার ব্যয় মিটাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্লো গতিতে এগোয় জীবন। জীবনের ঘানি টানতে টানতে এক সময় এসে আবার থমকে যায় জীবনের চাকা। মুখ থুবড়ে পড়ে জীবন। 
বহু বৈচিত্র ঘটনা প্রবাহ মারিয়ে আজকের এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে মারিয়ার জীবন। মারিয়া তার ছোট্ট জীবনের নানা প্রতিকূলতার কথা বলছিল ইমনের নিকট। ইমন নাক কুচকে মৃদু স্বরে শুধু বলে, আমরা দুঃখের স্মৃতি চারণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি কিন্তু সুখের দিনগুলো কখনই স্মৃতির আয়নায় ভাসিয়ে তুলি না। এটাই আমাদের জাতিগতভাবে সমস্যা। সুখ বোধটুকু জাগ্রত করে যদি দুঃখের মুখোমুখি দাঁড়াই তাহলে দেখবো দুঃখ জয়ে অনুপ্রেরণা পাবো। পাবো নিজের ভেতরে নৈতিক শক্তি। নৈতিক শক্তিই কিন্তু মানুষকে উজ্জ্বীবিত করে। করে আত্মশক্তিতে বলিয়ান। কথাগুলো এক নিমিষেই বলে ফেললো ইমন। মারিয়া ইমনের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে রুদ্র নীল চোখের মনিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। 
মারিয়া শহরের মেয়ে। চোরাগলির সুয়ারেজ পানির দুর্গন্ধ তাকে রাস্তা পেরুবার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। অনেক চড়াই উতড়াই অতিক্রম করে আজকের এই রমনা পার্কে এসে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া লেখার পাঠ চুকাতে না চুকাতেই সরকারী চাকরি পেয়ে গেছে। আর ইমন এখনও বেকার। লেখাপড়া শেষ হয়েও হলো না শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে ভর্তি হয়েছে। বি.সি.এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পরীক্ষার পর্ব অতিক্রম করতে পারেনি। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিধিবাম। কথায় আছে, ‘কপালের লেখন না যায় খন্ডন’। মানুষ স্বর্গে গেলেও কপাল তার সঙ্গে যায়। 
 কন মানুষ এতো স্বার্থপর হয়। স্বার্থপরতার জন্য আপন মানুষ পর হতে থাকে। পকেট খালি হলে বন্ধুও দূরে সরে যায়। দূরে সরে যায় মনের মানুষটিও। এরূপ অনেক উল্টা পাল্টা ভাবনা এসে ইমনকে গ্রাস করে ফেলে। আনমনে কয়েকটি দূর্বার ডগা ছিঁড়ে। এরপর ধীরে ধীরে ওঠে দাঁড়ায়। আনমনা ক্লান্ত পায়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। পিছন পিছন হাঁটতে থাকে মারিয়া। ততক্ষণে আলো আঁধারির লুকোচুরি খেলায়, পূর্ণতা পেয়েছে রমনা পার্ক। মানুষের নিকট প্রকৃতি তার রূপ লাবণ্য মেলে ধরেছে।
বেশ কয়েকদিন হলো ইমন এবং মারিয়ার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত নেই। সবাই যার যার মতো জীবন এবং জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ নেই। নেই প্রেম বিরহের খুচরা আলাপ। এটাই ওদের প্রেমের স্বভাব চরিত্র। কথা হচ্ছে তো হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা হচ্ছে। কথা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম ফেলে ওরা দু’জন মোবাইলে কথা বলছে। নতুন যে কেউ দেখলে ভাববে না যেনো কতো কালের কতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ওদের আলোচনা হচ্ছে। অন্য কোন দিকে মনোযোগ নেই। মনোযোগ শুধু সাজিয়ে গুছিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলা। এভাবে কিছুদিন চলবার পর হঠাৎ দেখা যাবে কথা বন্ধ। বলা নেই, রাগ নেই, অভিমান নেই হঠাৎ করেই কথা বন্ধ থাকে বেশ কয়েক দিন। 
এতো ঘন প্যাচাল পারতেই বা কে বলে, আবার কারণ ছাড়াই কেউ কাউকে ফোন দিবে না এরূপ মুড নিয়েই বা কে থাকতে বলে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই বৃথা। কারণ প্রশ্ন শূন্যে আবর্তিত হয়ে শূন্যেই মিলিয়ে যায়। কি জানি বাপু! থার্ড জেনারেশনদের মতিগতি বুঝা মুশকিল। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় থার্ড জেনারেশন মেধাবি এবং সৃষ্টিশীল হবে। এরা সৃষ্টিশীলতার আনন্দে মাতিয়ে তুলবে দেশ। জাতি বিশ্বায়নের রাস্তায় পায়ে হাঁটার যুতসই একটা মোটা দাগের অবলম্বন খুঁজে পাবে। অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এখনও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যা অচিরেই দূর হবে বলে আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। আমি আশাবাদি মানুষ। আর আশাবাদি মানুষরা আগামি দেশের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের মধ্যে বেঁচে থাকতে চায়। তাই আমি নিরাশার চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে চাই না। আশার সমুদ্র ভ্রমণে ভাসতে চাই সফেদ ফেনায়। আকাশের অবস্থাটা তেমন একটা ভালো নেই। সকাল হতে কেমন যেনো মুখটা গোমরা করে বসে আছে আকাশ। দুপুরের দিকে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। 
ফাগুনের শুরুতেই বৃষ্টি তেমন একটা সুখকর নয়। ফাগুনের আগুন শুধু এখন গ্রামের কৃষ্ণচূড়ার ডালেই লাগে না। লাগে শহুরের পথ, ঘাট, দালান কোঠা ছাপিয়ে যুবক যুবতীর অঙ্গে। সাদা জমিনের লাল পাড়ে শাড়িতে নারীরা সাজে। কপালে ইয়া বড় টিপ, মাথায় গোল করে প্যাচানো গাঁদা ফুলের মালা। ছেলেদের ধূতি, পাজামার উপরে পরিধেয় ফতুয়ার মধ্যে বাহারি কারুকাজ করা। খাটি এবং জীবন্ত যুবক যুবতীর চিত্র। হয়তো এটাই ফাগুনের আগমনের আগাম বার্তা। দোল যাত্রা, রেলি, শোভাযাত্রা, হোলি খেলা সবই এখন গ্রাম থেকে বিদায় হয়ে শহরের কোলে পাড়ি জমিয়েছে। যাক বাঙালির কালচার যে, এখনও ইট পাথর, লোহা লক্করের মাঝে টিকে আছে তাই বা কমতি কোথায়। সবচেয়ে অবাক হবার মতো বিষয় হলো, গ্রামীণ কালচার এখন বাহিরের জরাজীর্ণ পরিবেশে সাহেব বিবির উলঙ্গ নৃত্যের মুদ্রায় টিকে আছে।
সে যাই হোক, ফাগুনের আগুনলাগা গহীন বন এখন সোহরাওয়ার্দীর উদ্যান। প্রতিটি গাছের পত্র পল্লব ফাগুনের আগমনের জীবন্ত স্বাক্ষী। 
লালন ছাউনীর কিঞ্চিত দূরে একটি গাছের নিচে দূর্বা ঘাসের গালিচার উপর বসে আছে ইমন। ইমনের মন আজ ভারাক্রান্ত। পূর্বের সেই চঞ্চলতা নেই, নেই হাস্যোজ্জ্বলতা। বার বার মারিয়াকে ফোন দিচ্ছিল ইমন। ও প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দিচ্ছে।
মোবাইল করে যদি কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। মানুষ মানুষকে যদি তাচ্ছিল্য করে তাহলে তার ফোনটা বার বার কেটে দিতে পারে। কাউকে ফোনে না পাওয়া কিংবা কারো জন্য অপেক্ষা করা যে, নরক যন্ত্রণা ভোগের নামান্তর এ বিষয়ে ইমন হারে হারে উপলব্ধি করছে।
পশ্চিম দিগন্তে অস্তমিত হয়েছে সূর্য। সূর্য দেবীর প্রস্থানে ক্ষণিকের জন্যে হলেও রক্ত গঙ্গায় ভেসেছিল আকাশ। এখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজির পত্র পল্লবের ফাঁকে খেলা করছে আলো আঁধারির দৃশ্য। কিঞ্চিত দূরে খানিকটা ঝোপের মতো যেখানে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের সাথে খানিকটা উষ্ণ আলিঙ্গন বিনিময় করছে। প্রেমিক প্রেমিকার নিচু স্বরের কথাবার্তা এখানে বসে অল্পবিস্তর শুনছিল ইমন। ইমন পকেটের মোবাইল ফোনটা বের করে আরো কয়েকবার ট্রাই করে।
না কোন অবস্থাতেই ঐ প্রান্ত থেকে মারিয়া ফোন তুলছে না। ইমন রাগে দুঃখে অভিমানে হাতের মোবাইল সেটটি অন্ধকারের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। অন্ধকার আকাশের দিকে অনেক সময় তাকিয়ে থাকে। খোলা আকাশ থেকে নিংড়ে হা করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। হাত বুলায় নিজের মাথার চুলে। স্ব-জোড়ে একটি হাক ছাড়ে। এরপর পকেটের দেয়াশলাই বের করে আগুন জ্বালায়। হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজতে থাকে নিজের মোবাইল। অন্ধকারের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরে মোবাইল সেট। না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ মোবাইল সেট বেজে ওঠে। জ্বলে ওঠে মোবাইল সেটের আলো।
হ্যাঁ, ফোন করেছে মারিয়া। মারিয়ার ফোন আইডি নাম্বার দেখে খপ করে ফোন রিসিভ করে ফেলে। খুশিতে ফোন সেট কানে ঠেকায়। না অপর প্রান্ত থেকে কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। কানের সাথে মোবাইল সেট লেপটে ধরে। হালকা হৈচৈ এর শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। রাগে দুঃখে ফোন কেটে দেয়।
পাশের ঝোপের ভেতর থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ। গোঙানির শব্দ মিলিয়ে গিয়ে ক্রমশ চিৎকার চেঁচামেচিতে রূপান্তরিত হয়। ধস্তা ধস্তির আওয়াজ এখান থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই ঝোপের দিকে এগিয়ে যায় ইমন। ইমনকে এগিয়ে আসতে দেখে ঝোপের মধ্য থেকে একটি ছায়ামূর্তি দ্রুত পালিয়ে যায়। ছায়া মূর্তিকে ঘিরে ধস্তা ধস্তি এবং আবেগি কান্না জড়িত কণ্ঠের প্রতিধ্বনি এখান থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে ইমন ততক্ষণে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় ছায়া মূর্তি।
ইমন ঝোপের সামনে গিয়ে অসতর্ক অবস্থায় ছোট্ট একটি গাছের সাথে হোচট খায়। কোন রকম পড়ি তো উঠি করে টলে সামনে নিয়ে পূনরায় দাঁড়িয়ে যায়। একটি নারী মূর্তি ঝোপের মধ্যে মাথা গুঁজে বসে কোকাচ্ছে। কোকাচ্ছে, না গোঙাচ্ছে, না কাঁদছে এখনও পুরোটা ঠাওর করতে পারেনি ইমন।
ইমন নিঃসংকোচে ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে এরপর খপ করে হাত ধরে ধীরে ধীরে টেনে তুলে। এ কাজগুলো ইমন মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় করছিল। মেয়েটি প্রকৃতস্থ হয়ে ইমনের সাথে লাইট পোস্টের নিচে এসে দাঁড়ায়। আলোর ঝলক গিয়ে পড়ে মেয়েটির চোখে মুখে। এখনও মেয়েটির চোখে মুখে পানি। মেয়েটির ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে তর তর করে রক্ত ঝরছে। ইমনের মনে মায়ার উদ্রেক হয়। পকেট হাতড়ে রুমাল বের করে বৃদ্ধ আঙ্গুল বেঁধে দেয় ইমন।
ইমন আঙ্গুল বাঁধতে বাঁধতে প্রশ্ন করে তোমার হাতের আঙ্গুল কাটলো কিভাবে? মেয়েটির মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না। এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কান্নার ফাঁকে বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট চেপে শুধু বললো” জানোয়ার হাতের আঙ্গুর কামড়ে দিয়েছে”। কোমলমতি মেয়েটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইমন। ইমন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে একটি মেয়ের হাতের আঙ্গুল কেউ কামড়ে দিতে পারে। এও কি সম্ভব। ইমনের হৃদয় মন্দিরে ভাংচুড় শুরু হয়।
অপরদিকে কিঞ্চিত দূরে দাঁড়িয়ে মারিয়া সব দেখে। দেখে মেয়েটির হাত ইমন তার রুমাল দিয়ে বেঁধে দিচ্ছে। দু’জনকে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতেও দেখে। কিছুক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মারিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। উদ্যানের বাইরে চলে আসে। একটি রিকশা ডেকে রিকশায় উঠে। রিকশায় বাসায় ফিরতে ফিরতে ধন্যবাদ দেয় জ্যামের শহর ঢাকাকে। রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়াতে সময় মতো আসতে পারেনি মারিয়া। সময় মতো আসলে ইমনের কু-কীর্তি তার চোখে পরতো না। তার কাছে ইমন থাকতো পুত পবিত্র। যাক ভালোই হয়েছে ইমনের কার্যকলাপ সব চোখের সামনে দেখা গেল। এসব ভেবে চিন্তে মারিয়া দর দর করে ঘামছিল। মারিয়ার মনে হচ্ছিল এই বুঝি হাঁসফাঁস করে ভেতর থেকে দমটা বেরিয়ে যাবে। অনেক চিন্তার অথৈই জলরাশি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মারিয়াকে। মারিয়ার নয়নের জলে ভাসছে মুখ মন্ডল। অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে মনে, যে সব প্রশ্নের উত্তর আজ খুঁজে পাচ্ছে না মারিয়া।




(গল্প)
জীবন বোধের নামতা
সৈয়দ রনো

দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণায় যখন ওষ্ঠাগত প্রাণ ঠিক তখন হাতের নাগালের খড় কুটো ধরে বেঁচে থাকার নিরন্তন প্রচেষ্টা চালায় আসিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। মা-বাবার স্নেহের ছায়াতলে তিলে তিলে বেড়ে উঠেছে সে। কিন্তু আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই এই অনাকাক্সিক্ষত নাকাল অবস্থা। ভাগ্যকেই বা সম্পূর্ণ দোষ দিয়ে কি হবে! বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক হানা-হানি, কোন্দল কিংবা অসহিষ্ণু পরিবেশ অনেক অংশে দায়ী। গণতান্ত্রীক এই রাষ্ট্রিয় শাসন ব্যবস্থায় ভেতরে ভেতরে স্বৈরতন্ত্রের যে চর্চা, তা আজ নতুন করে বলার কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানে নির্বাচনের নামে এ দেশে কী প্রহসন হয়েছে। যা দিন দিন সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করাতে বিবেকবান মানুষের গায়ে ফোসকা পড়ার উপক্রম। রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে একদলের মানুষ অন্য দলকে ঘায়েল করতে সত্যকে মিথ্যা বানায় আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে রাষ্ট্রিয়ভাবে নির্যাতনের চিত্র সে এক করুন ইতিহাস। বিশ্বায়নের সভ্যতা যেখানে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে রাষ্ট্র বা সরকার যেখানে পৃষ্ঠ পোষকতা করার কথা কিংবা পৃথিবীর প্রায় দেশেই করছে। সেখানে আমাদের দেশের এই বাস্তব করুণ চিত্র সত্যিই লজ্জাকর। জাতি হিসেবে আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এরকম এক বৈরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সমাজ ব্যবস্থায় আসিফের পরিবার ভুক্তভূগীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আসিফের পিতা মোখলেছ উদ্দিন একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। যৌবনের প্রারম্ভে যুদ্ধে গিয়ে স্বাধীনতা ছিনেয়ে এনেছিলেন। এখন স্বাধীনতা শব্দটি এক ধূসর ইতিহাসের পা-ুলিপি হয়ে আছে তার কাছে। পাক হানাদারদের গুলিতে হারিয়ে ছিলেন একটি পা। পচন ধরা পা কেটে ফেলে এখন এক পায়ে ক্রাচ ভর করে হাঁটেন। বেঁচে আছেন শুধু এক বুক ভয়াল যন্ত্রণাকে ঘিরে। একে বেঁচে থাকা বলে না, মৃত্যুর নামান্তর মাত্র। না ভালোভাবে সংসার চালাতে পারেন, না পুত্র আসিফ আর কন্যা আফিফার লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেন। অনেক চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সরকার দলের লেজুড়বৃত্তি না করলে কোনো অবস্থাতেই সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা পাওয়া যায় না। ভুল ক্রমেই হোক আর শুদ্ধ ক্রমেই হোক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত হতে সংসার পরিচালনার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক গ্রহণ করেছিলেন, যা এখন তার জানের কাল হিসেবে প্রতি মুহুর্তে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটি ভাতা চালু ছিল, তাও সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজনীতির কড়াল গ্রাষে নিষ্পত্তি হয়ে ধণী হচ্ছে আরো ধণী, গরীর হচ্ছে সহায় সম্বলহীন-নিঃস্ব। সেই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে মোখলেছ সাহেবের পরিবার। সরাকরি দলের লেজুড়বৃত্তি করে মানুষ অবৈধ অর্থে তরতর করে উপরের দিকে উঠে যাওয়ার রেওয়াজ বাঙালীদের অনেক পুরনো ইতিবৃত্ত।
এই ভূখ-ে মানব জাতির বসবাস পৃথিবী সৃষ্টির পাক কাল থেকেই। আদিম হিংস্রতা বর্বরতাকে উপেক্ষা করে মানুষ জীবন ধারণ করেছে। মানুষের বেশ কিছু সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে তার মধ্যে আরাম, আয়েশ, বিলাস, খায়েশ মানুষের গুণকীর্তন শোনা, অপরকে আপন করে নেয়ার বাসনা উচ্চাভিলাষ, নাম, খ্যাতি, যশ কুড়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী, তদরূপ অমানবিক হলে কিন্তু ক্রোধের বশে এই মানুষই পৃথিবীর সর্ব নিঃকৃষ্ঠ প্রাণী হয়। মানুষ যেমন পর-উপকারী এই মানুষই আবার পরের অমঙ্গলকারী। জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক থাকার কারণে কিংবা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ে মানুষ ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। মানব সৃষ্ট কম্পিউটার, আবার সেই কম্পিউটার যা অজান্তে প্রয়োজনীয় একটি বস্তুর কার্যক্রমকে নষ্ট করতে মানুষ ভাইরাস সৃষ্টি করেছে। মানুষকে মানুষ সংবর্ধনা দেয় আবার মানুষকে আটকে রাখতে তৈরি হয়েছে জেলখানা। ইহকাল কিংবা পরকালে বিচার হবে মানুষের। অন্য কোনো প্রাণীর বিচার হবে না। কারণ মানুষের রয়েছে মেধা, প্রজ্ঞা, বুুদ্ধিমত্তা এবং বুদ্ধিমত্তাসহ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি।
মানুষ যে কতো ভালো হতে পারে আবার এই মানুষই স্বার্থের কারনে কতো খারাপ হতে পারে, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের মূল গল্পের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে রাজনীতি। এখন রাজনীতি প্রসঙ্গে দু’চারটি কথা বলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। 
এশিয়া মহাদেশ কিংবা উপমহাদেশের গ-ি পেরিয়ে কিংবা ধর্ম, বর্ন, বংশ, গোত্র, এলাকা ভেদে একেক দেশের রাজনীতির হালচাল একেক রকম। সামন্ত প্রভুদের হাত হতে রাজনীতি মুক্তি লাভের পর আবহাওয়া, জলবায়ু, কৃষ্টি-কালচার ভেদে একেক দেশের রাজনীতির কালচার একেক রকম। মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আমাদের রাজনীতিকে উপজীব্য করে ফুটিয়ে তুলতেই এতো আলোচনা, এতো কথার আয়োজন।
রাজনৈতিক দলের পালা বদলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদল ঘটে আর জীবন যন্ত্রনা বেড়ে যায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। সরকার আসে আর সরকার যায়। অথচ মানুষের দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণা বেড়ে আকাশচুম্বি হয়। আসিফদের মতো শত-সহস্র পরিবার ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়। মোখলেছ উদ্দিন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হবার পরেও রাজাকারের খেতাবে ভূষিত হোন। কারণ তিনি সরকারি দলের অন্ধ সাপোর্ট করতে পারেন না কিংবা জানেন না। সাদাকে সাদা বলা  আর কালোকে কালো বলা মোখলেস সাহেবের ধমনিতে প্রবাহিত। চাটুকারিতা তার একদম অপছন্দের বিষয়। সংসার চালাতে পারছেন না। না জোটে তার পরিবারে ক্ষুধার অন্ন, না জোটে সঠিক চিকিৎসা। পুরনো ভাঙ্গা একটি ক্রাচে ভর দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন মোখলেছ সাহেব। যৌবনের প্রারম্ভে তার দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে এক জনকে ডাক্তার, আরেক জনকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। মুক্তিযুদ্ধের ভাতা বন্ধ হবার পর তার স্বপ্ন ক্রমশ ফিকে হয়ে আসে। বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু সান্তনায় বুক বাঁধেন, যখন দেখেন এই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করেন। ওরকম অসৎ ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ঠিকাদার তার ছেলে- মেয়েরা না হোক, সেটাই সৃষ্টি কর্তার নিকট দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে সান্তনায় বুক বাঁধেন।
এই সমাজ সংসার রাষ্ট্র কার্যত অর্থে তাকে কিছুই দেয়নি বরং কেড়ে নিয়েছে যৌবনের উত্তাল দিন। নতুন বিবাহিত স্ত্রী খাদিজাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে গেলেন। নবজাতক শিশুর নিষ্পাপ চাহনীও সেদিন তাকে আটকাতে পারেনি। দেশের প্রতি গভীর মমতাবোধের ফসল হচ্ছে এই বৃদ্ধ বয়সে দু’বেলা দু’মুঠো পেট পুরে খাওন জোটে না। চোখের সামনে ছেলেটির লেখাপড়ার জন্য হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম তার বেদনার ঘায়ে লবনের ছিটার মতো সারাক্ষন জ্বলতে থাকে। ছেলে আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পড়ালেখার খরচ ম্যানেজ করতে দুই-তিনটি টিউশনি করায়। মেয়েটিরও একই অবস্থা কলেজে পড়ালেখার অবসরে একটি সেলাই মেশিন আছে। যা দিয়ে কন্ট্রাক্টে সেলাই করে, নিজ কাধে করে মাল দিয়ে আসে দর্জির দোকানে। ছেলে-মেয়ের উপার্জনে ওদের পড়ালেখা ভালোভাবে চলতো, কিন্তু তার মধ্যে বাবা-মাকে খাবার আর ওষুধ কিনে দিতে গিয়ে ওরা ভিষণ পেরেশানির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিস্কৃত শ্রেষ্ঠ রোগ হয়তো দুশ্চিন্তা। যে রোগের ওষুধ নেই। সেই দুশ্চিন্তা এখন মোখলেছ সাহেবের পরিবারের নিত্য সাথী।
রোগে, শোকে, দুশ্চিন্তায় জড়াগ্রস্থ মোখলেছ সাহেব ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ভর করে হাঁটা ক্রাচটিও সেদিন ভেঙ্গে গেছে। এখন বাঁশের একটি লাঠি কিংবা স্ত্রীর কাধে ভর করে হাঁটা-চলা করেন। মাঝে মধ্যেই গলা দিয়ে রক্ত বেরোয়। শ্বাস কষ্টে প্রাণপাখি উড়ে যাবার উপক্রম। শরীরটা দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবু বেঁচে আছেন মোখলেছ সাহেব এটাই সত্য, এটাই বাস্তব। হঠাৎ একদিন মোখলেছ সাহেবের পঙ্গু পায়ে ঘা দেখা দেয়। ছেলে আসিফ প্রায় জোর-জবরদস্তি করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডাক্তার দেখাতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তাররা তার পায়ের ঘায়ে ক্যান্সার হয়েছে বলে জানান। মরার উপর খাড়ার ঘা। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে আসিফ। এরপর টাকা ম্যানেজ করতে ছুটে চলে গলি হতে রাজপথ, আর রাজপথ ধরে প্রাসাদসম অট্টালিকার গা ঘেষে ছুটতে থাকেন এই ব্যস্ততম ঢাকার শহরে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনিতে ভালো ইনকাম নেই বলে মনোস্থির করে- সে রিকশা চালাবে। রাতে রাতে রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে কোনোভাবে চলে আসিফের বাবার চিকিৎসা। হঠাৎ একদিন একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে ওঠে আসিফের রিকশায়। তারা মিরপুর যাবে বলে ৭০ টাকা ধার্য করে। তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ রিকশাটিকে আটকে দেয়। ছেলে এবং মেয়ের ব্যাগ তল্লাশ করে পায় গান পাউডার, তাজা বোমা, পিস্তল, গুলি ইত্যাদি। এগুলো দেখে আসিফের চোখ ছানাবড়া! কিংকর্তব্য বিমূঢ় আসিফ। কিন্তু পুলিশ আসিফসহ তিন জনকেই ধরে নিয়ে যায়। আসিফ অনেক ভাবেই বুঝাতে চায় সে রিকশা চালায়, এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। কিন্তু আসিফের পকেটে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র এবং ভাড়া নেয়া রিকশা মালিকের গ্যারেজের বক্তব্যে পুলিশ পুরোপুরি সন্দেহ করে আসিফকে। পুলিশের বক্তব্য হলো- তুমি যদি এদের দলের লোকই না হবে, তাহলে মাত্র তিন চার দিন যাবৎ রিকশা চালাবে কেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী রিকশা চালাবে তা অবাস্তব। আসিফ অনেক করে বোঝাতে চায় তার বাবা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, হাসপাতালে ভর্তি। কোনো কথায় কর্ণগোচর করেন না পুলিশের বড় বাবু। নিরুপায় আসিফ চিৎকার চেচামি করে ছুটে পালাতে চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়। আসিফের পিঠে গুলি বিদ্ধ হয়। উপুড় হয়ে পরে যায় সে পিচ ঢালা রাজপথে। শুধু আসিফের ক্ষীণ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- বাবা আমি আসছি ওষুধ নিয়ে। ফিন্কী দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। ক্ষণিকেই রাজপথ বয়ে চলে রক্তের নহর। গুলি চালানো সেই পুলিশটি চিৎকার করে বলে- শালা রাজাকারের বাচ্চা জামাত, এবার পরপারে গিয়ে রাজাকারী করগা.....

No comments:

Post a Comment