মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
জন্ম ১৯৭১। পৈত্রিক নিবাস গ্রাম ও ডাক: পত্তাশী, উপজেলা: জিয়ানগর, জেলা: পিরোজপুর। পড়ালেখা এম, এ (ফার্স্ট ক্লাস)। লেখালেখি শুরু ১৯৯১ সালে ছাত্রাবস্থায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ ১৯৯২ সালে ‘অভিব্যক্তি’। ‘অনির্বাণ’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন। মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন প্রায় ৩ বছর। কুয়ালালামপুর থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তির স্বাদ’ ও রেঁনেসা’ পত্রিকার যথাক্রমে প্রধান সম্পাদক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, দেশে ফিরে সাপ্তাহিক চারদিক এর সহযোগি সম্পাদক, মাসিক সুতরাং এর সহযোগি সম্পাদক, সাপ্তাহিক অন্যধারা-এর সহযোগি সম্পাদক, মাসিক আনন্দনীড় এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ‘আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’তে শিক্ষকতা করছেন।
সেই সাথে মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ’র ছড়া, কবিতা, ছোট গল্প, শিশুতোষ গল্প, প্রবন্ধ জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত বই (একক ও যৌথভাবে) উনিশটি। বিভিন্ন টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সাহিত্য ও শিশু সংগঠনসহ সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
তিনি ইতোপূর্বে কবি শামসুর রহমান সাহিত্য পদক ২০১০, চিত্রশিল্পী এস, এম সুলতান সাহিত্য পদক ২০১১, মানবাধিকার সম্মাননা ২০১১, শেরে বাংলা স্মৃতি পদক ২০১২, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্মাননা স্মারক ২০১২, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট সম্মাননা ২০১২, বাংলাদেশ কলমিলতা একাডেমি সম্মাননা ২০১২, কবি নজরুল সাহিত্য সম্মাননা ২০১৩, স্যার সলিমুল্লাহ অ্যাওয়ার্ড ২০১৩, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য সম্মাননা ২০১৩, স্বাধীনতা সংসদ পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ এবং শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য “কিচির মিচির সাহিত্য সম্মাননা ২০১৩” অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি মাসিক ‘ভিন্নমাত্রা’র সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে এটি নিয়মিত প্রকাশ করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক।
মোবাইল: ০১৭১২০০৫৯৫৮, ০১১৯০৮৪৩৫৬৭,ই-মেইল: masummatra@gmail.com
ফেসবুক. পেইজ: masummatra
আমার চক্ষু যুগল
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
যে চোখের প্রশংসা শুনতে
হয়েছে লাজুক মুখে
আজ তা
ধ্বংসের মুখোমুখি
পীচঢালা রাস্তায় পোড়া
মবিলের কালোধোঁয়া
দুষিত বাতাসের প্রতিটি কণায়
বিষক্ত ভাইরাস
নর্দমার পরিত্যক্ত উড়ন্ত
ধূলোবালু
আমার চোখের সর্বনাশ ডেকে
এনেছে
সেইসাথে সমাজের কুলাঙ্গার মানুষের ডিজিটাল চোখের
ঝাপসা চাহনীতে
স্তরে স্তরে জমেছে
ময়লা আবর্জনার স্তূপ
আমার চোখের কর্ণিয়া থেকে
খসে পড়েছে
জমে থাকা সব
অমরকীর্তি!
সেই সবুজের প্রান্তর নেই
নীলাকাশের নীলম্বরীও নেই
তাই ধূসর আর
কালচে দেখি প্রতিটি অণু
মানুষ তার খোলস
পালটিয়ে হচেছ বিত্তবান
হালাল কিংবা হারামের মাঝে
রাখে না ফারাক
নকলের চাকচিক্যে অতল
গহবরে
আসলের সোনালী
ইতিহাস।
ফরমালিনযুক্ত খাদ্য আর
হাইব্রিড শাক- সবজি
খেয়ে
সাধারণ মানুষ বসবাস
করতে চায় গোয়াল
ঘরে
খেতে চায় গরু-
মহিষের সাথে একত্রে
ঘাস।
যে চোখ মসজিদের গম্বুজ
দেখেছে
যে চোখ সবুজের
পত্র পল্লব দেখেছে
যে চোখ মুক্তঝরা মায়ের
হাসি দেখেছে
যে চোখ প্রিয়ার মোহিত
সৌন্দর্য দেখেছে
সে চোখ পাপাচারে লিপ্ত
এই সমাজের রন্দ্রগুলো
দেখে দেখে স্তব্ধ!
হয়তো একফোটা অশ্রু
বিসর্জন দিয়ে
বিদায় নিবে, চিরবিদায়!
-----------------------------------------------
রচনা: চলন্ত বাসে
: উত্তরা থেকে গাজীপুর ১৪/৭/২০১৭
তোমার মত ‘তুমি’
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে হতে হয় না পরাজয়
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে হবেই হবে জয় নিশ্চয়।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে হতে হয় না বলি দান
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে নিতে হয় না প্রতিদান।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে মিথ্যা বলার নেই প্রয়োজন
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে মাতিয়ে দেবে সব আয়োজন।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে নির্বাসনে যেতে হয় না
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে কথা বলে সাধের ময়না।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে থাকে হৃদয়ে সুখের খোঁজ
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে বৃষ্টি নামে এমনিতে রোজ।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে হাস্নাহেনারা সুবাস বিলায়
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে শিল্পীরা ঠোঁটে ঠোঁট মিলায়।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে চোখের দৃষ্টি স্বপ্নে হাসে
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে স্বপ্ন ছড়ায় অভিলাসে।
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে চোখ ভেজে না চোখের জলে
তোমার মত ‘তুমি’ থাকলে ‘ওরা সুখী দম্পত্তি’ সবাই বলে।
সবাই আশ্রয় খোঁজে
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আকাশকে ডেকে বললাম এসো তোমার সাথে
সহযাত্রী হয়ে সমুদ্রের তীর ঘেষে তেপান্তরের দিকে যাই
আমাকে সে জানায় বড্ড একাকীত্ব জীবন তার।
পাহাড়কে মাথা উচু দেখে আর থরে থরে সাজানো
উচ্চাকাক্সক্ষা স্বপ্নের বাহুডোরে তার দিকে হাত বাড়াই
আমাকে জানায় পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় নিয়োজিত আছে সে।
রাতের আকাশে অগণিত তারকারাজির সাথে মিতালী করার
অভিপ্রায় ছিলো আমার
উষ্ণ চাঁদরে আলোকদ্যুতি ছড়িয়ে দীপ্তিময় আছে সে
আমাকে মাতাল না হওয়ার ইশারায় ‘খামোশ’ বলে থামিয়ে দেয়।
গাঢ় নিকষকালোর ভাঁজে ভাঁজে তোমার অস্তিস্ত খুঁজেও
সবকিছু হারাবার ভয়ে স্বপ্নলোকে লুকোচুরি আর
অনির্বাচনীয় অনুভূতি নিয়ে বুঝলাম
বিষণœতা আর দীর্ঘশ্বাসের মাঝে খুঁজলাম সজীব শান্তির পায়রা
একি! সবাই আশ্রয় খোঁজে যার যার আঙিনায় আপন ভাবনায়।
মাটির দেয়াল
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আবার যুদ্ধ হবে প্রত্যেকের ঘরে
স্লোগান স্লোগানে কেঁপে উঠছে
কংক্রীটের শক্ত দেয়াল
খসে পড়ছে থাই গ্লাসের আস্তর
চারিদিকে শোরগোল করছে মাতাল কমান্ডার।
দেশপ্রেম নেই; চরিত্রের কালিমা লেপনে
তাই ব্যবহার; ভিজে যাওয়া টিস্যু পেপার।
কবর, শ্মশানে ব্যস্ত শ্রমিকের দল
লাশের কফিন আসছে সকাল বিকাল।
কালো চশমার আড়ালে হাসে দানবের দল
ঝলসে গেছে পবিত্র মাটি আর সার্বভৌম দেশ
অর্থ বিত্ত, বৈভব সেই সাথে আব্রুও সম্মান
অবশিষ্ঠটুকুও শেষ
চারিদিকে হা হুতাশ।
ব্যস্ত সাইরেনে প্রকাশিত নগর
ভেঙ্গে পড়বে তৈজষপত্র
এবং মাটির দেয়াল।
মুখোমুখি
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
অবশেষে ছাইদানিতে জমা রাখলাম
কিছু নীল কষ্ট
পাথরের আঘাতে অবহেলায় পরে আছে
সাগরের ঢেউ কিংবা জলপ্রপাত খুঁজি তোমার বুকে
পুরনো ফসলের বুকে মাথা রেখে
যদিও এখানে অভিমান চলে না
বাস্তবতার মুখোমুখি তাই প্রতিদিন
অপেক্ষার নোঙ্গর ফেলি কষ্টের কফিনে
নেশার পায়রা উড়ে নগরের আধুনিক চড়ে
দোকানী ঠকায় আমায় পুরনো ঘি দিয়ে
ওর স্যালাইন কিনতে বাধ্য হয়ে
বারবার যাওয়া আসা ওয়াশরুমে।
নীল কষ্টেরা ভীড় করে দিনের শুরু ও শেষে
নিঃশ্বাসে তৃপ্তি বাড়ায়
এখানে অভিমান চলে না
এখানে নিজের কথা কেউ বলে না
এখানে দহন শোষনে কেউ টলে না।
মাটির পৃথিবী তাই শেষ ঠিকানা।
পোড়ামূখী
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
হৃদয় মন্দিরে ভালবাসার আকুতির দিন শেষ
হতাশার বালুচরে ডুবো জাহাজের উঁকি
দুঃশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি আদালতে সাঁটা
যা শালা, দূর হ! তুই পোড়ামূখী।
ভেঙ্গেছিস তুই সবুজ পাটাতন
জ্বালাতন সেতো সীমা রেখা ছাড়া
ইতিহাস তোকে করবে না ক্ষমা
কিছুদিন পরে তুই ই হবি বাঁধন হারা।
জেলে রেখেছিস রোলারের অঙ্গার লেলিহান শিখা
দেখিস! জলপ্রপাত হয়ে আসবে ফিরে
যদিও অবশিষ্ট থাকবে না ততদিনে
যখন ফিরবে সে আপন নীড়ে।
দুঃখ লাগে ওরে পোড়ামূখী তুই এখনো আছিস
নীলপদ্ম হয়েও কেন গোখড়া হয়ে বাঁচিস?
প্রি য় ত মা
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
কেবল তোমারই জন্য ভালোবাসার সবটুকু আমি রেখেছি জমা
তুমি আমার খুবই আদরের এবং ভালোবাসার প্রিয়তমা
তোমার চঞ্চলতা আর হৃদয়ের বিশালতা
আমাকে কেবল মুগ্ধই করে না
তোমার সঞ্জীবনী প্রেরণা আর আতিথেয়তা
আমাকে কেবল আশ্চর্যই করে না
তোমার অপলক দৃষ্টির সীমাহীন গভীরতা
আমাকে কেবল মোহনীয় করে না
বরং তুমিই হয়ে ওঠো জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
কেবল তোমারই জন্য ভালোবাসার সবটুকু আমি রেখেছি জমা
তুমি আমার খুবই আদরের এবং ভালোবাসার প্রিয়তমা।
ভালবাসার সন্ধি বিচ্ছেদ
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
কোন এক সুরেলা কণ্ঠে যেদিন শুনেছিলাম
‘পৃথিবীতে ভালোবাসা সবচেয়ে দামি’।
সেদিন থেকে সন্ধি বিচ্ছেদ খুঁজেছি ভালোবাসার
অবশেষে সমাসবাক্যে রূপান্তরিত করলাম।
শুদ্ধ এবং নির্মল চার অক্ষরের এক মূল্যবান শব্দ
তুমিই শেখালে এর মর্ম বিশাল আয়োজনে।
আবার সেই তুমি রূঢ় ভাষায় তীর ছুঁড়ে দিলে
গহীন অন্তরে ভাষান্তরিত করে খুব সাবলীলভাবে
আর আমি মাথা পেতে নিতে থাকলাম প্রতিদিন।
তোমার অট্টহাসি, উপহাস, নিক্ষেপিত তীর
সেই সাথে গালমন্দ মিশ্রিত ভালোবাসার সরলউক্তি।
কিন্তু যেদিন অস্তিত্বের মাঝে সুঁই ঢোকালে
সেদিন থেকে পথ খুঁজতে থাকলাম প্রাণে বাঁচতে।
কিন্তু যে আমাকে পথ দেখাবে, চিনাবে নতুন দিগন্ত
সে এখন আরেকজনের হাত ধরে হাঁটে শান্তিনিকেতনে
আর আমি চিলে কোঠা থেকে
অন্ধকারের ভয়ে বেড়িয়ে এসেছি
বাইরে দেখি ধোয়াচ্ছন্ন নীলাকাশ আর কণ্টকাকীর্ণ রাজপথ
তুমিই বল কার কাছে যাবো আমি, কার কাছে যাবো।
আলোর ভুবন গড়
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আজকে তুমি ছোট্ট আছো
কালকে হবে বড়
এখন থেকে জীবন গড়ায়
খোদার কালাম পড়।
সত্য ন্যায়ের পথে চলে
আলোর ভুবন গড়।
সত্য কথা বলতে শিখো
সত্য কথা তুমিও লিখো
অসত পথে চলে যারা
তাদের বারণ করো।
আমার বর্ণমালা
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
বর্ণমালার বর্ণগুলো
ধূসর এবং কালো
বর্ণমালার মাধ্যমেই
হৃদয় আলো জ্বালো
কত রক্তের বিনিময়ে
পেলাম বাংলা ভাষা
থাকতে হবে সাবধানে আজ
সকল সর্বনাশা।
বিশ্ব চেনে বাংলাভাষা
দিচ্ছে তারা মান
রাষ্ট্রভাষা, মাতৃভাষা
আমাদের সম্মান।
আমি ও প্রতিদিন
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
প্রতিদিন আমি হাসি
প্রতিদিন আমি কাঁদি
প্রতিদিন ভালোবাসি
প্রতিদিন ঘরবাঁধি
প্রতিদিন দেখি উদয়
প্রতিদিন দেখি অস্ত
প্রতিদিন এসব দেখে দেখে হই না অধিনস্ত
প্রতিদিন দেখি শক্তিমানের শক্তি
প্রতিদিন দেখি দুঃখিজনের ভক্তি
প্রতিদিন দেখি উন্মত্ততার উন্মাতাল
প্রতিদিন দেখি অকারণেই কিছুলোক বেশামাল
প্রতিদিন দেখি দুষ্টলোকের ক্রমাগত দুষ্টমী
প্রতিদিন দেখি সাধুসমাজের আচানক নষ্টামী
প্রতিদিন দেখি ভদ্রলোকের আড়াল করা হাসি
প্রতিদিন দেখি হৃদয় ভেঙ্গে দুঃখ রাশি রাশি
প্রতিদিন দেখি মিথ্যুক জনের মিথ্যা মিথ্যা খেলা
প্রতিদিন দেখি সত্য সন্ধানীর বিজয় অস্তবেলা
প্রতিদিন দেখি সত্য ইতিহাস আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ
প্রতিদিন দেখি মিথ্যে ভাষণ শেষ করেই আক্ষেপ
প্রতিদিন দেখি শোকার্ত মানুষের হৃদয়ে করুণ সুর
প্রতিদিন দেখি ভয়ার্ত পরিবেশে কাটে না পথের দুর
প্রতিদিন দেখি হিমালয় খোঁজে হিমালয় যে বোঝে
প্রতিদিন দেখি বিজ্ঞানীরা শরমে মাথা গোঁজে।
প্রতিদিন দেখি হল্লাকরে আহম্মকের দল
প্রতিদিন দেখি কারণ ছাড়াই দেখায় শক্তিবল
প্রতিদিন দেখি রাজনীতিতে চ্যালা-চামন্ডীর ভীড়
প্রতিদিন দেখি এদের বাগাতেই নেতাজনেরা অধীর
প্রতিদিন দেখি বেসুরো গান বাজায় নতুন মুখ
প্রতিদিন দেখি চর্চা ছাড়াই খোঁজে অন্য সুখ
প্রতিদিন দেখি ভুল করিয়া ভুলেরই দোষ দেয়
প্রতিদিন দেখি মুল ছাড়িয়া চলে সময় অসময়
প্রতিদিন দেখি মনিব খোঁজে কর্মচারীর দোষ
প্রতিদিন দেখি দোষী বানায় অমল-কমল ঘোষ
প্রতিদিন দেখি সুযোগ সন্ধারীরা সুযোগের অন্বেষণে
প্রতিদিন দেখি জাবর কাটে দুঃখ নিয়ে মনে।
কিশোর কবিতা
বিজয়ের গান
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
বিজয়গাঁথা ডিসেম্বরে
আনন্দেরই বান
এমন দিনে সবাই মিলে
গাই যে শুধু গান।
কত রক্তের বিনিময়ে
পেলাম স্বাধীনতা
সমুন্নত রাখতে হবে
যথা এবং যথা।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
ছোটদের বঙ্গবন্ধু
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: ডাক নাম: খোকা। পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ‘বঙ্গবন্ধু’ এটি ছিল তাঁর খেতাব বা উপাধি। বাংলার ‘অবিসংবাদিত এই নেতা যার নেতৃত্ব ছিল অনমনীয় ও আপোষহীন। আজ আমরা বাংলাদেশের মাটিতে বাঙ্গালীর অস্তিত্ব নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি গলা খুলে গান গাইতে পারছি যাঁর অবদানে তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ খৃষ্টাব্দের ১৭ মার্চ মোতাবেক ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ২ চৈত্র। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান, তার মাতার নাম মোসাম্মাৎ সায়েরা বেগম। ছয় ভাই আর চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৩য় আর ভাইদের মধ্যে প্রথম। সংসারে বড় ছেলে হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন পিতা মাতার খুবই আদরের সন্তান।
বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ:
বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে জানা যায় যে, তাঁর পূর্বপূরুষ বাগদাদের অধিবাসি ছিলেন। সেই ৮ম পূর্বপূরুষ যিনি ছিলেন তিনি দরবেশ শেখ আউয়াল। তিনি চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এসে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে বিবাহ করে সংসার শুরু করেন। দরবেশ শেখ আউয়ালের পুত্র শেখ জহিরুদ্দিন কাজের সন্ধানে ফরিদপুরের গোয়ালন্দ যান। তিনি সেখানে সংসার জীবন শুরু করেন। শেখ জহিরুদ্দিনের ছেলের নাম শেখ জান মাহমুদ। শেখ জান মাহমুদের ছেলের নাম শেখ বোরহান উদ্দিন। শেখ বোরহান উদ্দিন বিয়ে করেন টুঙ্গীপাড়ার কাজী বাড়িতে। বোরহান উদ্দিনের তিন ছেলের মধ্যে মেঝ ছেলের নাম শেখ আব্দুল হামিদ। আর শেখ আব্দুল হামিদের ছেলের নাম শেখ লুৎফর রহমান। এই শেখ লুৎফর রহমানের বড় ছেলেই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখে মুজিবুর রহমান।
শেখ লুৎফুর রহমান সিভিল কোর্টের একজন সেরে¯-ারদার ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর শিাজীবন ঃ ১৯২৭ সালে বঙ্গবন্ধুর শিা জীবন শুরু হয় অর্থাৎ তিনি ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সে স্কুলের নাম। গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় ২য় শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়া লেখা করে ১৯২৯ সালে। গোপালগঞ্জ পাথলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। বঙ্গবন্ধুর পিতা চাকুরি করতেন মাদারীপুরে। ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন দুরন্ত স্বভাবের তাই ছেলের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে নিজের কাছাকাছি রাখার জন্য তাঁর কর্মেেত্রর কাছাকাছি। মাদারিপুর ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। কিšন্তুএক বছর ছয় মাস যেতে যেতে বঙ্গবন্ধু এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর ডাক্তারী ভাষায় এ রোগের নাম ‘গ্লোকুমা” এই রোগের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রায় ৩ বছর পড়া লেখা করতে পারেন নি।
বঙ্গন্ধুর চোখের চিকিৎসা : ১৯৩৬ সালে বঙ্গবন্ধুর পিতা তাঁর বন্ধু- বান্ধব এবং শুভাকাঙীদের পরামর্শে সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে কোলকাতায় নিয়ে যান। সেখানে বিখ্যাত চু বিশেষজ্ঞ ডা. টি আহমদ কোলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চোখে অপারেশন করা হয়। আল্লাহ পাকের অসীম রহমেত ডা. আহমদের সফল অপারেশনের ফলে তখন থেকে কিশোর মুজিব চশমা ব্যবহার করতে শুরু করলেন। পরবর্তীতে তিনি গোপালগঞ্জ ফিরে এসে খি"ষ্টানদের পরিচালিত মিশন স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করেন।
১৯৪২ সালে শেখ মুজিব এস.এস.সি পাশ করে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডেয়েট এ ভর্তি হন। সেখানে তিনি হোষ্টেলে থাকতেন। হোটেল খরচ বাবদ এবং অন্যান্য খরচ বাবদ তাঁকে প্রতিমাসে ৭৫ টাকা দেয়া হতো। এই টাকা দিয়েই তিনি সকল খরচ চালাতেন এবং কোন বিলাসিতা করতেন ন। ১৯৪৭ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত বি.এ পরীার অংশ গ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিšন্তুএখানে পড়ালেখা করার সুযোগ পান নি।
কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বিভিন্ন প্রকার দাবী দাওয়া নিয়ে ধর্মঘট এবং ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু সে ধর্মঘটকে সমর্থন জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপগণ উক্ত আন্দোলনে নেতৃত্বে দেয়ার অভিযোগ বঙ্গবন্ধুকে জরিমানা করেন। তিনি এ অন্যায় নির্দেশনা ঘ"ণাভরে প্রত্যাখান করেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিস্কার আদেশ দেয়। কিšন্তুবঙ্গবন্ধু তো মাথা নোয়ানোকে পছন্দ করতেন না। তিনি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। কিšন্তুদুঃ খের বিষয় এখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ঃ ১৯৬৮ সাল। সারাদেশে তখন স্বদেশী আন্দোলনের ছোঁয়া লাগলো। স্থানে স্থানে আন্দোলন, জনসভা। এক জনসভায় ছুটে গেলেন কিশোর মুজিব। হঠাৎ সেই জনসভায় পুলিশের লাঠিচার্জ হলো। কিশোর মুজিব প্রতিবাদ করলেন। এ সময়ে কয়েকটি মিথ্যা অভিযোগে গোপালগঞ্জের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছয়দিন জেলেও থাকতে হয়। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম প্রতিবাদ ও প্রথম কারাবাস অর্থাৎ রাজনৈতিক জীবনের সূচনা।
আর একটি ঘটনা শোন : ১৯৪০ সালের কথা। শেখ মুজিব নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলাও ভারতবর্ষ মিলে একটি রাষ্ট্র ছিল। সে সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক। এবং খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাঁরা উভয়ে গোপালগঞ্জ মিশনে হাইস্কুল পরিদর্শনে এলেন। পরিদর্শন শেখ হাইস্কুলের প্রধান শিকসহ মন্ত্রীদ্বয় যখন ডাক বাংলার দিকে যা"িছলেন। তখন কিশোর মুজিব কয়েকজন ছাত্রের দলবল নিয়ে তাদের পথরোধ করে দাঁড়ান এবং স্থুলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বেশ কিছু দাবি দাওয়ার কথা জানান। বললেন, স্কুলের হোস্টেলের ছাদ ভেঙ্গে যাওয়ার কথা, বর্ষাকালে এলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কথা।
কিশোর মুজিবের এ ধরনের সাহস দেখে শুধু শেরে বাংলাই নন খাদ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মু" হলেন। শেরে বাংলা সাথে সাথে ছাদ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা দেয়ার প্রতিশ্র"তি দিলেন। এবং তাঁরা এই কিশোর মুজিবের ব্যক্তিত্ব দেখে তাঁরা এই কিশোর মুজিবের ব্যক্তিত্ব দেখে বুঝলেন এই কিশোরই একদিন সফল রাজনীতিবিদ হবে। তাই তারা ডেকে নিলেন ডাকবাংলোয়। তখন থেকেই তাদের øেহ ধন্য হন বঙ্গবন্ধ কোন মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর বৈবাহিক জীবন: ১৯৩৮ সাল। বঙ্গবন্ধুর বয়স সবে মাত্র ১৮ বছর। এ বছর তিনি বিয়ে হয় তাঁর চাচাতো বোন শেখ ফজিলাতুন্নেসা ওরফে রেনুর সাথে। বঙ্গবন্ধু তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। তিনি শেখ মুজিবের ৩ বছরের ছোট। তাঁর গর্ভে একে একে পাঁচ সন্তান জন্ম লাভ করেন। ৫ পুত্র-কন্যারা যথাক্রমে শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, শেখ কামাল শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। তাঁদের মধ্যে সবার বড় শেখ হাসিনা যিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
স্পোর্টস ম্যান শেখ মুজিব : তিনি কিশোর জীবনে প্রচুর খেলাধূলা করতেন। তাঁর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল ও ভলিবল। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন গুরুসদয় দত্তের প্রবর্তিত ব্রতচারি ন"ত্য। এ ব্রতচারি ন"ত্য থেকেই তাঁর মনমানসিকতায় বাঙালি চরিত্রের উম্মেষ ঘটে। এছাড়া তিনি ব্যাডমিন্টন, হা-ডু-ডু সবই খেলতেন। পড়া লেখায় বিশেষ আগ্রহ : শেখ মুজিব প্রায়ই সোহরাওয়ার্দী চিঠি লিখতেন। আগের দিনে কারও সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠিপত্র। শেখ মজিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। এ সময় পড়াশোনার প্রতি ও তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। দেশকে জানতে হলে, দেশ সেবা করতে হলে প্রচুর জ্ঞান রাখতে হবে।
আর এর জন্যই দরকার পড়াশোনা। রাজনীতির ফাঁকে ফাঁকে শেখ মুজিব নিয়মিত পড়ালেখা করতে পছন্দ করতেন।
ভাষা আন্দোলন : ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির কথা তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন আইন উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে বলে ঘোষণা দিলে তাৎণিক ভাবে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ জানান। খাজা নিজাম উদ্দিনের বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২ মার্চ ভাষার প্রশ্নে মুসলিমলীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সংগঠিত করার লে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্র¯-াব ক্রমে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিমলীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে। এ দিন বাংলাভাষার দাবিতে ঘর্মঘট পালন কালে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সাথে সচিবালয়ের সামনে বিােরত অবস্থায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারে সারাদেশে ছাত্র সমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। আন্দোলনের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভের পর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় বঙ্গবন্ধু সভা পতিত্ব করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে মাঝখানে বঙ্গবন্ধু প্রায় দু’ বছর পাঁচ মাস জেল খাটেন।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ঘোষনা করেন পাকি¯-ানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু এর প্রতিবাদে বন্দী থাকা অবস্থায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম জব্বার, রফিক বরকত, শফিউর শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু জেলাখানা থেকে এক বিব"তিতে ছাত্র মিছিলের পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যহত রাখেন। জেলখানা থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়ে তাঁকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর জেলে সরিেেয় নেয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
দানশীল বঙ্গবন্ধু ঃ পিতার চারিত্রিক দ"ঢ়তা এবং মায়ের দানশীলতা এ দুটো গুনই বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের উপর প্রভাব ফেলেছিল। দরিদ্র সহপাঠিদের তিনি আর্থিক সাহায্য করতেন। গোলঘর থেকে চুপে চুপে ধান চাল না মেপেই অভাবী বন্ধুদের দিয়ে দিতেন। কখন ও কাবের তহবিলের চাঁদা দিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে মা এসব দেখে ফেলতেন। কিšন্তুকিছুই বলতেন না। গরীব ছাত্রদের পড়াশোনা চালাতে তাদের বই কিনতে সাহায্য করার জন্য বঙ্গবন্ধু আর ও কয়েকজন মিলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তুলতেন। এমন কি গরীব মানুষদের জন্য নিতেন। মুষ্টি চাল। এভাবেই ছোটবেলা থেকেই তার মনে স্থান করে নেয় দুঃখী জনগণ ভাবনা কারও চরম দুদর্শা শুনলে তিনি স্থির থাকতে পারতেন না। ছুটে যেতে সেখানে যাথাসাধ্য সাহায্য করতেন।
বঙ্গবন্ধু খেতাব ঃ ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারী ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র- সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ লাখ ছাত্র-জনতার এ সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমান কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
‘বাংলাদেশ’ নামকরণ: ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ম"ত্যু বার্ষিকীর উপলে আওয়ামীলীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নাম করণের প্র¯-াব রাখেন ‘বাংলাদেশ’। শেখ মুজিব তাঁর ভাষণে বলেন। এক সময় এদেশে বুক থেকে মানচিত্রের প"ষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু ও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই আজ জনগণের প থেকে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকি¯-ানের পূর্বঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকি¯-ানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’ হবে।
মন্ত্রীপরিষদ থেকে বঙ্গবন্ধুর পদত্যাগ: ১৯৫৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খান পূর্ব পাকি¯-ানের মুখ্যমন্ত্রী হন। এবং তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসেবা গঠন করে। শেখ মুজিব এই মন্ত্রী পরিষদের ‘শিা’ বানিজ্য, শ্রম, দূর্নীতি, দমন এবং ভিলেজ এইড দপ্তরের দায়িত্ব পান।
১৯৫৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কাগমারিতে অনুষ্ঠিত হলো আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ভারতের তারা শংকর বন্দোপাধ্যায় হুমায়ুন কবির ও কাজী আবদুল ওয়াদুদ যোগ দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী। তখন পাকি¯-ানের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মাওলানা ভাষানী সোহরাওয়ার্দীর সামনেই বলেছিলেন। ৮ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় সরকার যদি আমাদের স্বায়ত্ত্বশাসনের পথে বাঁধা স"ষ্টি করে তবে সেদিন বেশি দূরে নয় যে দিন পূর্ব পাকি¯-ান- পশ্চিম পাকি¯-ানকে আসসালামু আলাইকুম জানাতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করবে না। ১৯৫৭ সালের ২১ মার্চ মাওলানা ভাষানী দলের সভাপতির পদত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধু অনেক অনুরোধ করেন মাওলানা ভাষানী কে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করতে। কিšন্তুমাওলানা ভাষানী তার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। এরপর মাত্র ২ মাস পরে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর মন্ত্রীত্বের পদ ত্যাগ করেন। দেশের কল্যাণ ও দলের সংগঠনের কাছে মতার মোহ তাঁর কাছে বড় ছিল না।
৭ মার্চ এর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু অংশ : ১। তোমরা হয়ত: জানো এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যিনি সকল জনগণ কে উদ্বুদ্ধ করে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ল ল জনতার মাঝে তিনি তাঁর ভাষনে বলে ছিলেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। এ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতিকে শ"ড়খল মুক্তির আহবান জানিয়ে ঘোষণা করেন। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। --- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্র"র মোকাবেলা করতে হবে। শত্র"র বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্থতি নেবার আহবাণ জানান। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। একদিকে রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ ও যেত অপরদিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ যেত। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলতেন। অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, স্কুল- কলেজ, গাড়ি, শিল্প কলকারখানা সবই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার মানুষের সেই অভূতপূর্ব সাড়া ইতিহাসে বিরল ঘটনা। মূলত ৭ মার্চ ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এদিকে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর পাকি¯-ানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিলখানা রাইফেলস সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত ১২ টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এটাই হয়ত: আমার শেষ বার্তা: আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে। তা নিয়ে সেনাবাহিনীর দখলদারীর মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানা"িছ। পাকি¯-ানি দখলদার বাহিনীর শেখ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের কে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
এর পরপরই তিনি বাংলার নিুলিখিত একটি ঘোষণা পাঠানÑ
‘পাকি¯-ান সেনাবাহিনী অতর্কিত ভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রা¯-ায় রা¯-ায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আপনাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের সংঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্র"দের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ। ইপিআর বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোষ নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেখ শত্র"কে বিতাড়িত করুন।
আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু অংশ-২
১৯৭২ সালের ১৯ আগষ্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন,
“বাবারা, একটু পড়ালেখা শিখো। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ কর। ঠিকমত লেখাপড়া না শিখলে কোন লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু থাকে বাবা- মাকে সাহায্য কর। তাই পড়া শিখেছো বলে বাাবর সঙ্গে হাল ধরতে লজ্জা করো না। কোদাল মারতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখো। কানাডায় দেখলাম ছাত্ররা ছুটির সময় দু’ পয়সা উপার্জন করতে চায়। আর আমাদের ছেলেরা বড় আরামে খান, আর তাস নিয়ে ছটফট খেলতে বসে পড়েন। গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুন গাছ লাগিও, কয়টা মরিচ গাছ লাগিও, কয়টা লাউ গাছও কয়টা নারিকেলের চারা লাগিও। বাপ- মারে একটু সাহায্য কর। কয়টা মুরগির পাল। কয়টা হাঁস পাল। জাতীয় সম্পদ বাড়বে। তোমার খরচ তুমি বহন করতে পারবে। বাবার কাছ থেকে যদি এতটুকু জমি নিয়ে ১০টি লাউ গাছ। ৫০টি মরিচ গাছ। কয়টা নারিকেল গাছ লাগিয়ে দাও। দেখবে ২/৩ শত টাকা আয় হয়ে গেছে।
তোমরা ঐ টাকা দিয়ে হয়ে গেছে। তোমরা ঐ টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবো কাজ কর। কঠোর পরিশ্রম কর। না হলে বাঁচতে পারবো না। শুধু শুধু বি.এ। এম.এ পাশ করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ। কৃষি স্কুল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুল, যাতে সত্যিকারে মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে। কেরানী পয়দা করেই একবার ইংরেজ শেষ করে গেছে দেশটাকে। তোমাদের মানুষ হতে হবে ভাইরা আমার আমি কিšন্তুসোজা সোজা কথা কই; রাগ করতে পারবে না। বুড়া হয়ে গেছি। রাগ কর আর যা কর আমার কথাগুলি শোন। লেখাপড়া কর আর নকল বঙ্গ কর। আর এই ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি- ডাকাতির বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে থানায় থানায় সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোল। প্রশাসনকে ঠিকমত চালাতে সময় লাগবে। এর একবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত গলদ আছে। মাঝে মাঝে ছোট খাটো অপারেশন করছি। বড় অপারেশান এখনও করি নাই। আ বলে দি"িছ মেহেরবানী করে আত্মকলহ করো না। সূত্র : বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সংকলন। মনোয়ার হোসেন চৌধূরী।
প"ষ্ঠা -১৫৪৬, ১৫৭।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু অংশ-৩
১৯৭২ সালের ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ছাত্র ভাইয়েরা দেশের যেদিকে তাকাই সেদিকেই চোর দেখি। চোরের জ্বালায় আমি অস্থির। কার উপর কোন কাজের ভার দিই, সেই চুরি করে। সেই জন্যেই বলেছিলাম, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষের দরকার। তাহলেই সোনার বাংলা গড়তে পারবো। তা না হলে শেখ মুজিবুরকে বেটে খাওয়ালেও পারা যাবে না।
এখন প্রয়োজন জনমত স"ষ্টি করা। বাংলার ছাত্র- সমাজ একাজ তোমরা পারো। তোমাদের নিয়ে আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলাম। যারা আগে ছাত্রলীগ করতো তারা জানত যে, আমি কি চাই? তাদের সঙ্গে নানা পরামর্শ করে আন্দোলন করতাম। তারা আমার নির্দেশ মত কাজ করত। তাই বলি এখন ও সংগ্রাম শেষ হয় নাই শরু হয়েছে মাত্র। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শ"ড়খলার প্রয়োজন। অনেক বিদেশে দেখে এসেছে, শ"ংখলাবোধ কাকে বলে। কিšন্তুআমাদের এখানে তো সব ফি" স্টাইল; বহুদিন বলব বলব করে বলিনি। কিšন্তুআজ দু:খের সাথে একটা কথা বলতে চাই- হয় আমাকে প্রধানমন্ত্রীর গদি ছাড়তে হবে। আর না হয় চরম আঘাত করতে হবে।
তোমরা সংঘবদ্দ থাকলে ওদের কীভাবে ঠান্ডা করতে হয় তা ইনশা আল্লাহ আমি জানি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সংকলন, প"ষ্ঠা-১৫২, ১৫৬,
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু অংশ-৪: বাংলাদেশ ক"ষক, শ্রমিক, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দেয়া ভাষাণ
আত্মসমালোচনা চাই: আজকে এই যে নতুন এবং পুরনো যে সম¯- সিস্টেম- এ আমাদের দেশ চলেছে। এর জন্য আমাদের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে। আত্মসমালোচনা না করলে আত্মশুদ্ধি করা যায় না। আমরা ভুল করেছিলাম। আমাদের বলা হয় যে, ভুল করেছি। আমি ভুল নিশ্চয়ই করব কারণ। আমি ফেরেশতাও নই, শয়তান ও নই। আমি মানুষ; ‘আমি ভুল করবই। আই ক্যান রেকটিফাই মাইসেলফ’ আমি যদি রেকটিফাই করতে পারি। সেখানেই আমার বাহাদুরি। আর যদি গোঁ ধরে বসে থাকি যে, না আমি যেটা করেছি। সেটাই ভাল। দ্যাট ক্যানট বি হিউম্যান বিং। ফেরেশতা হইনি যে সব কিছু ভাল হবে। হতে পারে ভাল। উই উইল রেকটিফাই ইট। কেনো আমার মানুষকে বাঁচাতে হবে। আমার বাংলাদেশের শোষণহীন সমাজ গড়তে হবে। আমরা নতুন ল্যান্ড সিস্টেম এ আসতে চা"িছ। আমরা কো-অপারেটিভ এ আসতে চা"িছ। দিস ইউনিয়ন কাউন্সিল ওল্ড ব্রিন্টিস ইউনিয়ন কাউন্সিল। যেখানে যা দেওয়া হয়। অর্ধেক থাকে না। সঙ্গে সঙ্গে সাফ। সেজন্য একমাত্র উপায় আছে যে, আমরা যে মাল্টিপারপাস কো- অপারেটিভ চালু করতে যা"িছ: এটা যদি গ্রো করতে পারি আ¯ে- আ¯ে- এবং তাকে যদি আমরা ডিস্ট্রিক্ট এবং তানা কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারি। তাহলে দেশের মঙ্গল হতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। এজন্য ডেডিকেটেড ওর্য়াকার দরকার। এটা উইদাউট ডেেিকটেড ওর্য়াকার হতে পারে না। সেই জন্য আজকে আমি চা"িছ আর্মির মধ্যে হোক, নেভীর মধ্যে হোক, পুলিশ হোক, সিভিল এডমিনি স্টেশন হোক, পলিটিশিয়ান হোক। যেখানেই হোক ভাল লোক যেখানে আছে। তাঁদের এক জায়গায় করে কাজে লাগাতে হবে। যাও ওখানে বসো। কাজ করে নিয়ে, এসে। আর্মির তো দরকার নাই, খালি খালি বসে আর্মির অতো পয়সা খরচ করার তো দরকার নাই। আই ওয়ান্ট মাই আর্মি। এ পিপলস আর্মি। আই ডু নট ওয়ান্ট মাই আর্মি টু ফাইট এগেইনস্ট এডিবডি। বাট আর্থ ওয়ান্ট মাঠ আর্মি টু ডিফেন্স মাইসেলফ এন্ড অ্যান্ট দি সেম টাইম টু ওয়ার্ক।
-বঙ্গবন্ধুর ভাষন সংকলন। প"ষ্ঠা-২৫৩, ২৫৪।
বঙ্গবন্ধুর ভাষনের কিছু অংশ-৫ : সফল কাজই সকলের
আর একটা ফ্যাশান আছে আমাদের এই কাজটা তো ফুড ডিপার্টমেন্টর, এটা তো ইরিগেশনের, আমার তো না। ডিস্ট্রিক্ট, সাবডিভিশনে সব জায়গাতে হয় কী? একজন আপনার বড় অফিসার। আমরা যখন কোথাও যাব, দেখবো যে, রা¯-ায় একটা ইট পড়ে আছে, ঐটা আমার ডির্পাটমেন্টের না, একথা বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। হোয়াট ইজ দিস মেন্টালিটি মাস্ট বি চেইঞ্চড। প্রত্যেকটি লোক, প্রক্যেকটি কাজ আমার মাটি কাটা আমার কাজ, ফ্যাক্টরী ও আমার কাজ, রা¯-া বানানোও আমার কাজ। আমি একটা হই অফিসিয়াল আমি একটা পলিটিশিয়ান, আমি একটা পলিটিক্যাল ওয়ার্কার। আমি একটা এম পি, আমি এদেশের একটা কর্মচারী একজন পুলিশ অফিসার। আই হ্যাভ মাই রেসপন সিবিলিটি। এখানে চুরি হ"েছ। এখানে অন্যায় হ"েছ। এখানে খারাপ হ"েছ এটা বলার অধিকার আমার থাকবে। দেখার অধিকার থাকবে।
সেই জন্য আজকে যদি পলিটিক্যাল র্অগানাইজেশন স্ট্রং না করা হয়। ভিলেজ লেভেল থেকে আরম্ভ করে শেষ পর্যন্ত যাকে ওয়াচ ডগ বলা হয়, তা যদি না থাকে, তাহলে দেশের মঙ্গল করা যায় না। শুধু সরকারি কর্মচারীর ওপর নির্ভর করে। দেয়ার মাষ্ট বি এ ব্যালেন্স! দেয়ার মাস্ট বি পিপলস মবিলাইজেশন। আমাদের হোল ক্যান্ট্রিকে মবিলাইজ করতে হবে ফর ডেফিনিট পারপাস। দেখুন বাংলাদেশের কৃষকও পিছিয়ে নাই। আমি সার দিতে পারি নাই যার সার দিয়ছে তার থার্টি পাসেন্ট চুরি হয়ে গেছে। স্বীকার করেন? আমি স্বীকার করি। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারব না। মিত্যা বলে একদিনও হারাম এদেশের প্রেসিডেন্ট থাকব না। আমার যে সার আমি দিয়েছি, তার কমপে থার্টি পারসেন্ট ব্লাক মার্কেটিং এ চুরি হয়ে গেছে। আমি যে ফুড দিই, তার কুড়ি পাসেন্ট চুরি হয়ে যায়। আমি যে মাল পাঠাই গ্রামে গ্রামে, তার ২০%। ২৫% চুরি হয়ে যায়। সব চুরি হয়ে যায়। হুইট আমি তো হুইট পয়দা করি না, খুব কমই করি, তবু কোনো বাজারে হুইট পাওয়া যায় না? গর্ভনমেন্ট গোডাউনের হুইট। সার তো আমি ওপেন মার্কেটে বিক্রি করি না, তবু কোনো বাজারে সার পাওয়া যায় না? লেট আস ডিসকাস দিস ম্যাটার। দেয়ার শ্যাল বি এ ফি" এন্ড ফেয়ার ডিসকাশন।
আমাদের একটি নিনিস মনে রাখা দরকার। যে লোক হাসতে হাসতে জীবনের মায়া কাটিয়ে ফাঁসি পর্যন্ত যেতে পারে, যে জানে, গুলী হয়ে এক ঘন্টা পর মারা যেতে পারে, সেই মানুষ মতার জন্য মিথ্যা কথা বলবে না। এটা আপনাদের জেনে রাখা উচিত। এই গুলি কি করে আপনারা করবেন? এই এগিকাল্রচার আমার নয়, চুরি হয় হোক। এই ফুড আমার নয়, চুরি হয় হোক। এটা আমার নয়- চুরি হ"েছ হোক। এসব চলতে পারে না। নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড এগিইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলইজ না কররৈ শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না। এবং সেই সঙ্গে সিস্টেমই পরিবর্তন করতে হবে। ঘুণে ধরা সিস্টেম দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যায় না। এই সিস্টেমই হল করাপশন এর পয়দা। এই সিস্টেম করাপশন পয়দা করে এবং করাপশন চলে।
জনগণকে বেশী ভালাসার পরিণতি-ই কী এই?
প"থিবীর ইতিহাসে ববর্রতম এক রাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। ভোর রাত। কিছু মতালোভী জুনিয়র সামরিক অফিসার দ্বারা পরিবার পরিজন সহ বঙ্গবন্ধু নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল যার বয়স ছিল মাত্র দশ বৎসর দশ মাস, দুই পুত্র বধূ সুলতানা কামাল ও পারভীন জামাল, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের সবাইকে ঘাতকরা বুলেটের আঘাতে হত্যা করে সে কালো রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে।আরো হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, সেরনিয়াবাতের পুত্র-কন্যা আরিফ, বেবনী, নাতি চার বছরের সুকান্ত আব্দুল্লাহ ভাতিজা শহীদ, বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনি তার স্ত্রী বেগম আরজু মনি, কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।বঙ্গবন্ধুর দু মেয়ে শেখ হাসিনা যিনি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বার ও শেখ রেহানা বিদেশে অকার কারণে প্রাণে বেঁচে যায়।
যে টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মেছিলেন, তার শৈশব কাটিয়েছেন সেখানে তাঁকে কবর দিল ঘাতকেরা। কয়েকজন মৌলভী ছাড়া তার কবরের পার্শ্বে তখন আর কেউ ছিলেন না।
কি নিমর্ম পরিহাস। কোটি মানুষের হৃদয়ের মনি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির জনকের এ-কী পরিণতি?
তবে ঘাতকেরা তাকে হত্যা করতে পারে নি, তার নশ্বর দেহটা শুধু নেই, তিনি বেঁচে আছেন সারা বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে কোটি মানুষের হৃদয়ে। কবির ভাষায়- “যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গোরী মঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান।”
টুঙ্গিপাড়া। বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে প্রতিবছর রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী সহ সকল শ্রেণীর মানুষ যান। তোমরা ও সময় করে একদিন দেখে এসো। আর দেখে এসো ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ীটি যে বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সন থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বাঙালীর মুক্তির জন্য আন্দোলন পরিচালনা করেছেন।
সে বাড়িটি এখন যাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যাদুঘর। এখানে আছে তার স্ম"তি বিজড়িত অনেক কিছু।
১৯৯৪ সালে আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িটিকে যাদুঘর করা হয়েছে যে বাড়ির সিঁড়িতে এখনো লেগে রয়েছে বুলেটের আঘাতে তার প্রাণহীন দেহের রক্তের দাগ-
যা মনে করিয়ে দেয় আরও অনেক মহৎ প্রাণের কথা- দেশের স্বার্থে জীবন বিসর্জন দিয়েও পরিণতি যাদের এক সেই মহাত্মা গান্ধি, আব্রাহাম লিংকন, মর্টিন লুথার কিং এমনি আরও অনেক মহৎ প্রাণ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
জঙ্গীদের সূত্রপাত
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
পত্রিকা আর টেলিভিশন
এক নিউজে ভরাসব,
জঙ্গী এলো, জঙ্গী গেলো
সবই দেখি পরাভব।
কিন্তু এরা কেমন করে
জঙ্গী হওয়ার সুযোগ পায়,
সবার আগে উত্তর দিন
শ্রদ্ধাভাজন বাপও মায়।
একই সাথে বলতে হবে
সম্মানিত শিক্ষকগণ,
পড়ালেখার পাশাপাশি
কেন অন্য আয়োজন!
মহান পেশার শিক্ষাগুরু
মহান আপনার কর্ম,
শিক্ষা দিন ঐ ছেলেদের
সঠিক তথ্য-ধর্ম।
তাইতো সবার ভাবতে হবে
সন্তানেরই ভবিষ্যত,
সবার দাবী ঐক্য গড়ো
করছি আমি সহমত।
আপনার ছেলের বন্ধু কারা
কার সাথে সে আড্ডা দেয়,
পড়ালেখায় ফাঁকি দিয়ে
কী কারণে বাড্ডায় যায়।
আড্ডা খুঁজুন, বাড্ডা খুঁজুন
আরও খুঁজুন মোবাইল ফোন,
মাঝে মাঝে ব্যাগও খুঁজুন
আরও খুঁজুন ছেলের মন।
বি:দ্র: বাড্ডা-রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------
মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অবদান
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
লেখক : সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা ও চেয়ারম্যান, ভিন্নমাত্রা রিসার্চ সেন্টার।
স্বাধীনতা বাংলা ও বাঙালির গর্ব। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করেছে এই মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। তোমরা হয়তো জানো শুধু বড়রাই যুদ্ধ করে এদেশের লাল সবুজ পতাকা অর্জন করেছিল। কিন্তু শুনে অবাক হবে অনেক শিশু-কিশোরও একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবন বাজী রেখেছিল। কেউ বা ইনফরমার হয়ে কাজ করে মুক্তিবাহিনীর সাহায্য করেছে। এ দেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে প্রাণ দিয়েছিল শত সহ¯্র কিশোর।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রায় ৪ লাখই ছিল শিশু-কিশোর। আর যেসব নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল কিশোরী। রাতের আঁধারে অথবা প্রয়োজনীয় যেকোনো মুহূর্তে এক ক্যাম্পের খবর অন্য ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে তোমাদের মতো শিশুরা। তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছে। আবার বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে ঢুকে সংবাদ বা কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়েছে।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের তত্ত্বাবধায়ন করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে গোলাবারুদ ও অস্ত্র সরবরাহ করা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে বেড়ানোসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য ছোট খাটো কাজ করেছে শিশু-কিশোররা। যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতার আনন্দ মিছিল ও উৎসবেও ছিল বাংলার শিশুদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধ বিয়ষক বিভিন্ন আলোকচিত্র এবং ভিডিওতে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের চিত্র তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ।
বাকী অংশ ৭ এর পাতায়
চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’, তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মুক্তির গান’ এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্রে তোমরা দেখতে পেয়েছো মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণের চিত্র। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ও নাটকের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবেই বর্তমানে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণের কথা।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। এখনো মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য তোমাদেরও ভূমিকা চাই। কারণ, যে জাতি তার অতীত ইতিহাস জানে না সে জাতি সুন্দর আগামী নির্মাণ করতে পারে না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং ভাল মন্দ বিচার করে তাকে পথ চলতে হয়। কে শত্রু কে মিত্র, কোনটা ভুল কোনটা শুদ্ধ এ বিষয়টি জানতে ও চিনতে না পারলে তাকে পথ চলতে হোচট খেতে হয়। সে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।
যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন, তাদের কাছে দাবি, শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদানের কথাও সকলকে জানাতে হবে এবং শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পারলে তারাও দেশ গড়ায় অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে সক্ষম হবে।
লেখক : সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা ও চেয়ারম্যান ভিন্নমাত্রা রিসার্চ সেন্টার। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’, তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মুক্তির গান’ এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্রে তোমরা দেখতে পেয়েছো মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণের চিত্র। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ও নাটকের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবেই বর্তমানে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণের কথা।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। এখনো মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য তোমাদেরও ভূমিকা চাই। কারণ, যে জাতি তার অতীত ইতিহাস জানে না সে জাতি সুন্দর আগামী নির্মাণ করতে পারে না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং ভাল মন্দ বিচার করে তাকে পথ চলতে হয়। কে শত্রু কে মিত্র, কোনটা ভুল কোনটা শুদ্ধ এ বিষয়টি জানতে ও চিনতে না পারলে তাকে পথ চলতে হোচট খেতে হয়। সে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।
যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন, তাদের কাছে দাবি, শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদানের কথাও সকলকে জানাতে হবে এবং শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পারলে তারাও দেশ গড়ায় অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে সক্ষম হবে।
লেখক : সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা ও চেয়ারম্যান, ভিন্নমাত্রা রিসার্চ সেন্টার।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
দূর আকাশের ঐ সীমানায়
উড়ছে ঘুড়ি উড়ছে
মন মোহনার এ ইশারায়
ঘুরছে ঘুরি ঘুরছে।
ঐ সীমানায় চায় যেতে মন
ঘুড়ির সাথে সাথে
ঘুড়ির সুতোয় পাক খেয়ে যায়
মন আবিরে গাঁথে।
আমার এ মন যায় ছুটে যায়
কিশোর ছিলাম যখন
হারিয়ে যেতাম ঘুড়ির সাথে
বুঝি আমি এখন।
সেদিন কী আর ফিরে পাবো
ছেলেবেলার কাল
স্বপ্ন দেখে কাটাই এখন
এই হয়েছে হাল।
সোনামণি
-মুহম্মদ মাসুম বিল্লাহ
সকাল বেলার পাখি হতে
চায় যে সোনামণি
যায় উঠে যায় শুনলে পড়ে
মিষ্টি আযান ধ্বনি।
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে যখন
আল্লাহু আকবার
মিষ্টি করে বেজে ওঠে
মসজিদে বারবার।
আকুল হয়ে যায় যে প্রাণ
আকুল হৃদয় মনি-ঐ
ভোগ বিলাসে মত্ত যারা
ঘুমিয়ে তারা থাকে
কেবা আল্লাহ, কেবা রাসূল
কিছুই নাহি ডাকে।
আমার হৃদয় খুঁজে কেবল
ইসলামেরই খনি। ঐ
হে রাসূল
-মুহম্মদ মাসুম বিল্লাহ
হে রাসূল, কি করে বোঝাই তোমায়
বড় প্রয়োজন ছিল তোমাকে এখন।
গুনাহের বোঝা নিয়ে আমরা যারা
হয়ে গেছি আজ সব দিশেহারা।
কোনটি ভাল আর কোনটি মন্দ
বুঝিনা বুঝিনা কিছুই এখন।
তোমাকে ভুলে যাই কারনে অকারনে
তোমাকে খুজে পাই কিছু লোক যে কারনে।
সে পনও আজ রুদ্ধ প্রায়
হৃদয়ে আঘাত আসে বুঝি এখন।
কী যে হবে আমাদের বুঝিনা কিছু
তবে আমি ছুটবো তোমারই পিছু।
সে কথা যেনে রেখো হে প্রিয় তুমি
আবে কাওসার দিও ওগো তখন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
তোমার দয়া
-মুহম্মদ মাসুম বিল্লাহ
যত বলি আর যত লিখি
শেষ হবে না তো কোনদিন
আল্লাহ তুমি দয়ার সাগর
তুমি রাব্বুল আলামীন।
লা ইলাহা মন তাসবীহ জপে
ইয়া মালিকাল মূলকী
ইয়া যালযালালী ওয়াল ইকরাম
শান্তি তুমি দিলকী।
চন্দ্র তারায় দেখি যেথায়
সবতে তোমার সাদিকীন।
ইয়া বাকিউ ইয়া রাশীদু
ইয়া আহাদু ডাকি
আশহাদু লা ইল্লাল্লাহ
নুরে রঙে আঁকি।
সকল কাজে সন্ধ্যা সাঝে
তোমার দয়া সীমাহীন।
-------------------------------------------------------------------------
মুহূর্মূহু ভালোবাসা
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আমি যাকে ভালোবাসি
তাকে ভালোবাসতে চাই
তারই সাথে সারাজীবন
মূহুর্মূহু হাসতে চাই।
কারণ তিনি ভালোমানুষ
এবং খুবই চমৎকার
এই ব্যাপারে কে কে আছেন
আমার কথায় অমতকার।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
তোমার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আর
তর্জনী আঙ্গুলের নির্দেশনায়
এ রিক্ত বুকে আমি অনুপ্রাণিত
আমি মাঝে মাঝে ছুটে যাই
৩২ নম্বরের সেই বাড়িটার দিকে
অপলক দৃষ্টিতে অবিরাম চেয়ে থাকি।
এইতো সেদিন পরন্ত বিকেলে
আমার সন্তানকে দেখালাম
হাজার বছরের এক শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে।
তোমার ব্যবহার্য জিনিষপত্র বাসন-কোসন
আর রক্তমাখা ভাঁজ করা কাপড়গুলো
এবং তোমার চায়ের কেটলি ও কলমটাও
আমি তোমার কণ্ঠের ঘোষণা শুনে আবার থমকে দাঁড়াই
এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
--------------------------------------------------------------------
পেপার পড়া
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
পেপার এবং ম্যাগাজিন
হয় না পড়া কারও
খবর ছাড়া চলতো না যার
হয় না পড়া তারও।
ফেসবুক আর টেলিভিশন
এক নিমিষেই খবর দেয়
কষ্ট করে পেপার পড়া
অযাথাই সময় ব্যয়।
এই ভাবনা ভেবে ভেবে
পেপার পড়া হয় না যার
চোখ-কান-মন সবই যাবে
হবে নতুন ক্যান্সার।
নিত্য নতুন প্রযুক্তিতে
তরুনরা আজ ভাসছে
ম্যানয়ালকে বাদ দিয়ে
কারা যেন হাসছে।
-------------------------------------------------------------------
শপথ
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
দেশটাকে আজ গড়তে হবে
এগিয়ে এসো আজই
নতুন কিছু মন্ত্র দিবো
থাকলে তুমি রাজি।
প্রথম মন্ত্র নাও জেনে নাও
সত্য কথা বলবে
হাসি খুশি থাকবে সদা
সঠিক পথে চলবে।
পরের মন্ত্র নাও জেনে নাও
জ্ঞান আহরণ কর
সকল খারাপ ছেড়ে দিয়ে
সরল পথটি ধর।
পরের মন্ত্র নাও জেনে নাও
গুরুজনকে মানবে
বড় হওয়ার মহৎ মন্ত্র
এটাও তুমি জানবে।
আরো আছে অনেক মন্ত্র
কিছু বলতে চাই
সকল মন্দ রুখতে হবে
এমন শপথ চাই।
-------------------------------------------------------------------------
শিশুর মাথায় বুদ্ধি আছে
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
শিশুর মাথায় বুদ্ধি আছে
হরেক রকম বুদ্ধি
ভালো মন্দ চিনতে পারে
করতে পারে শুদ্ধি।
কে তাকে স্নেহ করে
কে তাকে দেয় গাল।
কে তাকে দেয় উপদেশ
কার কথায় ঝাল।
কার হাসি আদর মাখা
কে বাসে ভালো
কিছু মানুষ দেখলে শিশু
মুখটি করে কালো।
সবকিছুই বুঝতে পারে
শিশুর সাদা মন
মারধোর নয় শিশুটিকে
করুন আপনজন।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
ভালো থেকো বন্ধু প্রতিদিন, চিরদিন
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
‘পথের সাথিরে চিনে নিও বন্ধু
মনের গভীরে তারে বুঝে নিও
ভুল করো না তারে চিনে নিতে
অকৃত্তিম ভালোবাসা তাকে দিও।’
সৈয়দা আফরোজ সাকিনা আমাদের খালামণি। আমরা কয়েক পরিবার মিলে বেড়াতে গেলাম কক্সবাজারে। তিন দিনের ভ্রমণ। ছোট, বড়, তরুণ, তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছিল। হোটেল সী গালে ৮টি রুম ভাড়া নেয়া হলো। হোটেল সী গাল একনামে চেনে সকলেই। এটি একেবারে সমুদ্রতীরে অবস্থিত। এখান থেকে সমুদ্রের সফেদ জলের ঢেউগুলো অনায়াসে উপভোগ করা যায়। আমাদের খালামণি ঢাকা থেকে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আমরা ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে সন্ধ্যায় রওয়ানা হয়ে সকালে গিয়ে পৌঁছলাম। তারপর ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে এক দুপুর ঘুমিয়ে নিল। বিকেলবেলা হাঁটতে বের হলো সকলে। খালামনি হাঁটতে পারছিলেন না। তবুও সকলের সাথে বের হলেন। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে হেসে ওঠলেন। সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। গম্ভীর প্রকৃতির খালামণি এত জোরে হাসলেন কেন? আমরা দেখলাম খালামণির বন্ধু যে কিনা আমেরিকা প্রবাসী, প্রায় ৪২ বছর পর দেখা হয়ে গেল। দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে প্রথমে খুশিতে কান্না করে দিলেন। তারপর হাসির জোয়ারে পুলকিত হলো প্রকৃতি। শুরু হলো তাদের আলাপচারিতা। বললেন, কিছু স্মৃতি ঝুলে থাকে মনের গভীরে। মনকে দোলা দেয় ক্ষণে ক্ষণে। তাই এ বয়সে আবার মিলিত হয়ে অতীতের ঢেউ বর্তমানে কিনে এনে সুখ কুঁড়িয়ে আনলাম ক্ষণিকের জন্য। ফিরে গেলাম সেই ছোট বেলার মধুময় জীবনে। কী যে ভাললাগা ছিল সেই মুহুর্ত। দু’জন দু’জনকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন। আবারো জড়িয়ে গালে-মুখে চুমু খাচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতে হারিয়ে গেলেন ছোটবেলার হাজারো স্মৃতির মাঝে। বারবার তাদের কথায় ফুটে উঠছিল ‘আমি একদিনের জন্যও তোমাকে ভুলিনি’ ভুলবো কী করে তুমি-আমি যে বন্ধু। বন্ধু-বন্ধুকে কী ভুলতে পারে? খালামণিকে দেখলাম অনেকক্ষণ সাগর পাড়ে সময় কাটালেন। আর পুরনো সেই স্মৃতিগুলো দু’জনেই রোমন্থন করলেন। সে সময়ের অন্যান্য বন্ধবীদের কথা বলাবলী করলেন। বললেন, বান্ধবীরা যেন আজও ছায়ার মতো আমার কাছেই। হাত বাড়ালেই পাবে-আজই আমার বাঁশি। ভুলি নাই, আবার ফিরে যাবো সবার মাঝে যদি বেঁচে থাকি। অতীতের সব স্মৃতি খুঁজে নিব।
দীর্ঘ সময় পর যার যার ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিদায় বেলা বললেন, ভালো থেকো বন্ধু প্রতিদিন, চিরদিন।
লেখক: সম্পাদক, মাসিক ভিন্নমাত্রা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
মৌসুমী ফল
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আমে আছে ভিটামিন
কাঁঠাল ও ঢের
বেল যদি খেতে চাও
এসো তুমি ফের।
কদবেল আনারস
পেয়ারাও লিচু
মৌসুমি ফলগুলো
খাবে কিছু কিছু।
জাম, কুল, জামরুল
তরমুজ, কলা
এতসব খেতে হবে
তাই হলো বলা।
---------------------------------------------------------------------------
জঙ্গিরা সব ভাগ!!
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
জঙ্গিরা সব ভঙ্গী করে
নানান অজুহাতে
ধর্মকে আজ বর্ম করে
বোমা ফাটায় রাতে।
জঙ্গিদের এই ভঙ্গীগুলো
রুখতে হবে সবার
খুঁজতে হবে আস্তানা কৈ
সকাল বিকাল ন'বার।
এ দেশটা ভদ্রলোকের
জঙ্গিরা সব ভাগ!!
জঙ্গি মুক্ত করতে হবে
জাগরে সবে জাগ।
------------------------------------------------------------------------
চাই, চাই
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
আলো চাই ভালো চাই
সব মুখে হাসি চাই
মন্দের অবসান
মুছে দিতে চাই চাই।
দিতে চাই নিতে চাই
ভালোবাসা পেতে চাই
সব মুখে কথা চাই
ঐক্যের ডাক চাই।
রন্ধনে গ্যাস চাই
কলে কলে পানি চাই
শিশু মুখে বাণী চাই
শিশু অধিকার চাই।
কলমের কালি চাই
মলমের গুণ চাই
নাই নাই এ কথার
অবসান চাই চাই।
খাবারের খোঁজ চাই
পেট ভরে ভোঁজ চাই
কাজের প্রয়োজনে
রোজ রোজ ফোন চাই।
ভালো কিছু মন চাই
পরিবেশ জোন চাই
কথা কাজে মিল চাই
কাজ শেষে বিল চাই।
রোদ চাই ছায়া চাই
নদী চাই জল চাই
অকারণে বাড়াবাড়ির
অবসান চাই চাই।
মানুষের লাজ চাই
বেকারের কাজ চাই
সীমারের বুকে চাই
দয়া চাই মায়া চাই।
অধীনের লোকটাকে
ক্ষমা করে দিতে চাই
পথপানে গতি চাই
খাঁটি সোনা রূপা চাই।
পিঠা চাই মিঠা চাই
ভাঁপা পুলি পিঠা চাই
অতি শীত গরমের
অবসান চাই চাই।
সস্তায় চাল চাই
বস্তায় মাল চাই
ভেজাল পণ্যের
অবসান চাই চাই।
বাজারের ফর্দটা
ম্যাডামের কম চাই
তবে ভাল খেতে চাই
মুখে স্বাদ পেতে চাই।
পদ্মায় সেতু চাই
দূর দেশে যেতে চাই
আম, জাম বেল চাই
কম দামে তেল চাই।
অফিসের বসকেও
কাজে বিজি থাকা চাই
আরো আরো আরো চাই
আচরণ ভালো চাই।
সংসদে নেতা চাই
ভোট নিয়ে জেতা চাই
ভালো ভালো কাজ চাই
ডাল ভাত মাছ চাই।
দেশ নিয়ে ধোকাবাজি
হরতালে বোমাবাজি
এ সবের সুযোগটা
দিতে নাহি, নাহি চাই।
সংসারে সুখ চাই
ভালো ভালো মুখ চাই
নারী, মদ, জুয়া খেলা
অবসান আজি চাই।
আদালত প্রাঙ্গন
সত্য ও সুশাসন
নিভৃতে কেন কাঁদে
জবাবটা পেতে চাই।
যানজটে প্রতিদিন
কত যে ক্ষতি হয়
সে হিসেব কষে নয়
অবসান চাই চই।
যেই মুখে সুখ নাই
তারে সুখ দিতে চাই
সুখের খোঁজে তাই
দিন রাত ছুটে যাই।
আলেমের মুখে কেন
গীবতের মত পাপ
এ সবের অবসান
চাই চাই আজই চাই।
নারীদের অধিকার
আমাদের স্বাধিকার
জোড়াজুড়ি করে নয়
এমনিতে চাই চাই।
ভালো ভালো মা চাই
সাথে ভালো বাবা চাই
দাদা-দাদী, নানা-নানী
আদরের হাসি চাই।
আরো আরো আরো চাই
এক থেকে বারো চাই
যেই বুকে তের নাই
তারে আরো দিতে চাই।
কাগজের সংবাদে
সত্যের লেশ চাই
দেশ চাই বেশ চাই
অধীনতা শেষ চাই।
-----------------------------------------------------------------------